সমুদ্রের নিচ দিয়ে ওমান পর্যন্ত গ্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করছে ইরান। সেই পাইপলাইন ভারত পর্যন্ত টেনে নেওয়ার বিষয়টি ইরান বিবেচনা করতে পারে বলে জানিয়েছেন ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহদি সাফারি।
এমভিআইআরডিসি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার মুম্বাই আয়োজিত এক বৈঠকে এ কথা বলেছেন ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
ইরানের রাজধানী তেহরানে আগামী ৭ থেকে ১০ মে ইরান এক্সপো ২০২৩ অনুষ্ঠিত হবে। মূলত সেই মেলার প্রচারণা চালাতে মাহদি সাফারি ভারত সফরে আসেন। এ ছাড়া আরও ১১টি গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনাও ইরান খতিয়ে দেখছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে এমভিআইআরডিসি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার মুম্বাই।
ইরানের ওপর অনেক দিন ধরেই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আছে। তা সত্ত্বেও ভারতের সঙ্গে ইরানের বাণিজ্য সম্পর্ক ভালো। দিন দিন তা আরও বাড়ছে।
‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র খবরে বলা হয়েছে, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারত ইরানের পাঁচটি বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর একটি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মাহদি সাফারিকে উদ্ধৃত করে এ কথা বলা হয়।
আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ভারতে ইরানের রপ্তানি বেড়েছে ৬০ শতাংশ। গত দুই মাসে তা বেড়েছে ৯০ শতাংশ। এতে বোঝা যায়, ইরান অপরিশোধিত তেলের বাণিজ্য থেকে বেরিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের বহুমুখীকরণ করছে। এ ছাড়া ইরান ভারতের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
মাহদি সাফারির ভারত সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের চাবাহার বন্দর দিয়ে ভারত যে মধ্য এশিয়া, ককেশিয়া ও ইউরোপীয় বাজারের প্রবেশ করতে পারে, তার প্রচারণা চালানো। ইন্টারন্যাশনাল নর্থ সাউথ ট্রানজিট করিডর ব্যবহার করে ভারত সেই সুযোগ নিতে পারে।
মাহদি সাফারি আরও বলেন, এই পথে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশ, যেমন আরব আমিরাত ও কাতারের সঙ্গেও ইরান কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে ভারতে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত ইরাজ এলাহিও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ইরান ভারতের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। ইরান ভারতের জ্বালানি ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অপরিশোধিত তেল ও সার সরবরাহ করতে পারে।’
এদিকে ইরান অর্থ পরিশোধ ব্যবস্থা সুইফটের বিকল্প তৈরি করেছে। ১০টি দেশকে সঙ্গে নিয়ে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান ইরাজ এলাহি। এ ছাড়া ইরান জ্বালানি, জৈব ওষুধ, চিকিৎসা উপকরণ ও অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে বিনিময় প্রথা চালু করেছে। বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে এই ব্যবস্থায় বাণিজ্য করছে তারা।
এদিকে মিডল ইস্ট আইয়ের এক সংবাদে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ইরান ও রাশিয়ার ব্যাংকব্যবস্থা সংযুক্ত হয়েছে। ফলে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কোপে থাকা এই দুটি দেশ সুইফট ব্যবস্থা পাশ কাটিয়ে বাণিজ্য ও লেনদেন করতে পারবে। অন্যদিকে চীনও সুইফটের বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলছে। অনেক দেশ তাতে যোগ দিচ্ছে। অর্থাৎ এরা এখন পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে বিকল্প ব্যবস্থা গড়ার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে।
এদিকে রাশিয়া চলতি বছরে প্রথমবারের মতো ট্রেনযোগে ইরানে তেল রপ্তানি শুরু করেছে। তেল খাতের সঙ্গে জড়িত তিনটি সূত্র এবং রপ্তানিসংক্রান্ত তথ্য উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে। রাশিয়ার তেলের যারা নিয়মিত আমদানিকারক, সেসব দেশ আমদানি বন্ধ করার পর মস্কো তেহরানের কাছে নতুন পথে তেল বিক্রি শুরু করেছে।
রাশিয়া ও ইরান উভয়েই পশ্চিমা অবরোধের শিকার। এই অবরোধ দুর্বল করা এবং নিজেদের অর্থনীতি আরও জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে দেশ দুটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে। উভয় দেশই মনে করে, পশ্চিমাদের অবরোধ অন্যায়।