অর্থনীতিতে ব্যর্থতার অভিযোগ মাথা পেতে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। এ খবরে ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের দর কিছুটা বেড়ে যায়। কিন্তু শুক্রবার আবারও পাউন্ডের দরপতন হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার প্রতি পাউন্ডের দর ১ দশমিক ১১ ডলারের নিচে নেমে যায়। সেপ্টেম্বর মাসে দেশটির সরকারি ঋণ ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে—২০ বিলিয়ন পাউন্ড। খবর বিবিসি।
এদিকে দেশটিতে মানুষের কেনাকাটা কমে গেছে। মহামারির আগের তুলনায় মানুষের কেনাকাটা এখন কম। ব্রিটেনের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস এ তথ্য দিয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে দেশটির মানুষের কেনাকাটা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পড়ে গেছে।
গত মাসে পাউন্ডের রেকর্ড দরপতন হয়। প্রতি পাউন্ডের বিপরীতে ১ দশমিক শূন্য ৩ ডলার মিলেছে তখন।
ব্রিটেনের দুর্দশার যেন শেষ দেখা যাচ্ছে না। কোভিডের অভিঘাতে বড় দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকোচন হয়েছে ব্রিটিশ অর্থনীতি। এখন পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার যে প্রক্সি যুদ্ধ চলছে, তাতেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে দেশের মানুষ। জ্বালানির দর আকাশছোঁয়ায় আসন্ন শীতকাল কীভাবে তারা পার করবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনাকল্পনা। মূলত নানা ধরনের অনিশ্চয়তার কারণে ব্রিটিশ পাউন্ডের ওপর মানুষের নির্ভরতা কমে যাচ্ছে।
২০২২ সালে মার্কিন মুদ্রার বিপরীতে প্রায় ২০ শতাংশ দর হারিয়েছে পাউন্ড। এ সময়ে ইউরোর দরপতন হয়েছে ১৫ শতাংশ। জাপানি ইয়েনের দরও একইভাবে পড়ছে। শুধু ডলার নয়, গত সপ্তাহে বিশ্বের বেশির ভাগ মুদ্রার বিপরীতেই দাম হারিয়েছে পাউন্ড। আর দ্য ইউএস ডলার ইনডেক্সের তথ্যানুসারে, চলতি বছর সামগ্রিকভাবে ডলারের দর বেড়েছে ২০ শতাংশ।
ক্রমবর্ধমান দেনা ও পতনশীল মুদ্রার জোড়া ধাক্কায় যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি এবং তার সম্পদের ওপর মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। সরকার কর হ্রাসের কারণে ভবিষ্যতে বাজেটঘাটতি বাড়ছে। সরকারি ঋণও মাত্রাছাড়া হয়ে যেতে পারে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির চলতি হিসাবের ঘাটতি জিডিপির ৮ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছেছে, আধুনিক ইতিহাসে যা গভীরতম।
গত আগস্ট মাসে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। ফলে কয়েক মাস ধরে যে মন্দার কালো মেঘ আকাশে ঘনীভূত হচ্ছে, তা আরও গভীর হলো বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
যুক্তরাজ্যের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, আগস্টে দেশটির উৎপাদন খাত ও গ্রাহকভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছে। আর সে কারণেই আগস্টে অর্থনীতি শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। বিশ্লেষকেরা ভেবেছিলেন, আগস্টে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি থমকে যাবে, তবে সংকুচিত হবে, এমন কথা তাঁরা ভাবেননি। সে মাসে পারিবারিক ও ব্যবসায়িক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।