দিন কয়েক আগেই দেশের আর্থিক ‘ডামাডোলের’ জেরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস তাঁর অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছিলেন। লিজের সেই সিদ্ধান্ত তখন সমালোচনার মুখে পড়ে। কনজারভেটিভ পার্টিতে লিজের সহকর্মীরাই বলেছিলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর ওপর নিজের ব্যর্থতার দায় চাপালেন লিজ। তাঁকে বলির পাঁঠা করা হলো।’ তখন লিজ ট্রাস বলেছিলেন, অর্থনৈতিক ভুলের জন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থী, তবে পদত্যাগ করবেন না। এ পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার নিজেই ইস্তফা দিলেন লিজ।
ক্ষমতায় আসার পর সংক্ষিপ্ত বাজেট দিয়ে আলোচনার জন্ম দেন লিজ ট্রাস ও তাঁর অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ারতেং। কর ছাড়সহ নানা ধরনের ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। এ প্রক্রিয়ায় ২০২৭ সালের মধ্যে মোট ৪৫ বিলিয়ন পাউন্ড কর ছাড় দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। কোয়ারতেংয়ের ভাষায়, এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি স্থবিরতার দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে প্রবৃদ্ধির সুস্থচক্রে প্রবেশ করবে। তিনি আরও বলেন, ‘নতুন যুগের প্রবৃদ্ধির জন্য আমাদের নতুন মনোভঙ্গি দরকার।’ কিন্তু তাঁর ও লিজ ট্রাসের আশায় গুঁড়েবালি।
ট্রাসের পরিকল্পনা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করে, পাউন্ডের মান ও সরকারি বন্ডের মূল্য পড়তে থাকে। পরিস্থিতি এমন নাজুক হয়ে পড়ে যে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বাজার চাঙা করতে ৬৫ বিলিয়ন পাউন্ডের কর্মসূচি নিয়ে বাজারে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়।
সমালোচনার মুখে বরখাস্ত করা হয় কোয়াসি কোয়ারতেংকে, তখন তিনি বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের যৌথ বৈঠকে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে ছিলেন।
এরপর নতুন অর্থমন্ত্রী হন জেরেমি হান্ট। তিন সপ্তাহ আগে ঘোষিত ট্রাসের সংক্ষিপ্ত বাজেটের প্রায় পুরোটাই গত মঙ্গলবার বাতিল করে দেন হান্ট। তিনি জানান, ন্যূনতম আয়কর থাকছে ২০ শতাংশতেই, ট্রাস যেটি কমিয়ে ১৯ শতাংশ করেছিলেন। ট্রাস তাঁর ‘মিনি বাজেটে’ আগামী দুই বছরের জন্য বিদ্যুৎ বিলের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। হান্ট জানান, দুই বছর নয়, আগামী এপ্রিল পর্যন্ত এ নিয়ম চালু থাকবে। এরপর দেশের অর্থনীতির অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া বিদেশি পর্যটকদের জন্য সরাসরি ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্সে (ভ্যাট) ছাড়ের যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন ট্রাস, সেটাও বাতিল করে দেন নতুন অর্থমন্ত্রী। ফলে আগে যে প্রক্রিয়ায় বিদেশি পর্যটকদের কেনাকাটার পর ভ্যাট ছাড়ের জন্য আবেদন করতে হতো, এখনো তা-ই করতে হবে।
জেরেমি হান্ট অর্থমন্ত্রী হওয়ার পরও শান্ত হয়নি ব্রিটেনের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। এর জেরে এবার লিজ ট্রাসকে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়। আগে থেকেই জোর গুঞ্জন চলছিল, কনজারভেটিভ পার্টির জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা চলমান পরিস্থিতি থেকে ‘উদ্ধার অভিযান’-বিষয়ক আলোচনায় মিলিত হবেন, যেখানে নেতা হিসেবে লিজ ট্রাস থাকবেন কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। খবর বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ানের।
তবে এত কিছুর পরও কুল রক্ষা করতে পারলেন না লিজ ট্রাস। জানা যায়, মূলত অর্থনৈতিক কারণেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।