রাশিয়ার জ্বালানি তেল নিয়ে চীন–ভারতের টানাটানি

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

এপ্রিল মাসেও ভারত সবচেয়ে বেশ জ্বালানি তেল আমদানি করেছে রাশিয়া থেকে। এতে গত মাসে ভারতের জ্বালানি তেল আমদানির ৩৬ শতাংশই এসেছে রাশিয়া থেকে। কিন্তু একই সঙ্গে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে, মার্চে যা ছিল মাত্র ৪ শতাংশ।

মূলত চীনের জ্বালানি চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে ভারতে রাশিয়ার তেল আসার প্রবৃদ্ধি কমেছে বলে ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে।

গত বছরের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ২৯ ও ২৬ শতাংশ। এরপর গত মার্চে সেই প্রবৃদ্ধির হার নেমে আসে ১ দশমিক ৮ ও এপ্রিল মাসে তা আবার কিছুটা বেড়ে ৪ শতাংশে উঠেছে।
রাশিয়ার তেল সস্তায় কেনা যাচ্ছে, মূলত এ কারণেই ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বাড়িয়েছে। চীনও এখন একই পথে হাঁটছে। বিশেষ করে উরাল তেলের প্রতি ভারত ও চীনের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। কারণ, এই তেল জি-৭–এর বেঁধে দেওয়া দর ৬০ ডলারের কম দামে বিক্রি হয়। এ ছাড়া এ তেলে সালফারের উপস্থিতি কম।

সারা বিশ্বে তেলবাহী কার্গোর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে ভরটেক্সা। সেই ভরটেক্সার বিশ্লেষক সেরেনা হুয়াং বলেছেন, ‘এই উরাল তেল নিয়ে চীনের আগ্রহ থাকায় রাশিয়া থেকে ভারতের জ্বালানি আমদানিতে কিছুটা ভাটা পড়বে।’

তবে গত এপ্রিলে ভারতের উরাল তেল আমদানি ৯ শতাংশ বাড়ে, গত মার্চে যেখানে এই তেলের আমদানি কমেছিল ৫ শতাংশ। ভারত এ তেলই বেশি আমদানি করে। এপ্রিলে রাশিয়া থেকে ভারতের আমদানি করা জ্বালানি তেলের ৭৩ দশমিক ৬ শতাংশই ছিল উরাল, মার্চে যা ছিল ৭০ আর জানুয়ারি মাসে ছিল ৭৯ শতাংশ।

এপ্রিল মাসে ভারত রাশিয়া থেকে দিনে ১৬ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, মার্চ মাসে যা ছিল ১৬ লাখ ১০ হাজার ব্যারেল। অন্যদিকে চীন গত মাসে রাশিয়া থেকে দিনে গড়ে ১৩ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। ইউরোপ গত মাসে রাশিয়া থেকে দৈনিক গড়ে ২ লাখ ৬ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে।
মার্চে ভারতের জ্বালানি তেল আমদানি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। এপ্রিলে দেশটি দৈনিক গড়ে ৪৬ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে।

এদিকে ভারত রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করে পরিশোধনের পর তা আবার ইউরোপে রপ্তানি করছে। তবে এপ্রিলে তা–ও কিছুটা কমেছে। এপ্রিলে দৈনিক গড়ে ২ লাখ ৬৪ হাজার ব্যারেল তেল ইউরোপে রপ্তানি করেছে তারা, মার্চে যা ছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার ব্যারেল।

যুক্তরাষ্ট্রেও পরিশোধিত তেল রপ্তানি করছে ভারত, মার্চে যা ছিল দৈনিক গড়ে ১ লাখ ৬ হাজার ব্যারেল; এপ্রিলে এর পরিমাণ ৩০ হাজার ব্যারেল কমেছে। মূলত ইউরোপের বাজারে রপ্তানি করলে বেশি মুনাফা হচ্ছে বলে ভারতীয় পরিশোধনাগারগুলো ইউরোপের বাজারে বেশি নজর দিচ্ছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউরোপ রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করতে অন্যান্য উৎস থেকে তেল কিনছে।