আগামী বছরের মধ্যে ইউরোপে বড় ধরনের কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে ইউনিলিভার। কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেছেন, দাপ্তরিক কর্মীদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা আছে। কোম্পানির প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াতেই এই পরিকল্পনা।
শেয়ারহোল্ডারদের চাপে আছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই ভোক্তাপণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি। এ পরিস্থিতিতে কোম্পানির নতুন প্রধান নির্বাহী শীর্ষ নির্বাহীদের বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ইউরোপে মোট ৩ হাজার ২০০ দাপ্তরিক কর্মী ছাঁটাই করার পরিকল্পনা আছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস এ খবর দিয়েছে।
এই কর্মী ছাঁটাই ইউনিলিভারের উৎপাদনশীলতা কর্মসূচির অংশ; চলতি বছরের মার্চে এই প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তখন বলা হয়েছিল, বিশ্বজুড়ে ৭ হাজার ৫০০ কর্মী ছাঁটাই করা হবে। এবার তার অংশ হিসেবে ইউরোপের কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা জানানো হলো। সংবাদে বলা হয়েছে, ইউরোপে ইউনিলিভারের দাপ্তরিক কর্মীর সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার।
ইউনিলিভারের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা কনস্ট্যানটিনা ট্রাইবো জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে দাপ্তরিক কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কারখানাভিত্তিক কর্মীরা এই পরিকল্পনায় নেই।
ইউনিলিভার লন্ডনভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি। প্রাথমিকভাবে তারা লন্ডন শেয়ারবাজারে অন্তর্ভুক্ত। তবে ইউরোপের কোথায় ঠিক কত কর্মী ছাঁটাই করা হবে, সে বিষয়ে এখনো পরিষ্কারভাবে জানায়নি এই কোম্পানি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিলিভার আরও বলেছে, যে কর্মীদের ছাঁটাই করা হবে, তাঁদের সঙ্গে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আলোচনা শুরু হবে।
ইউনিলিভারের ইউরোপিয়ান ওয়ার্কস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হারমান সোগবার্গ বলেন, ইউরোপের প্রায় সব কার্যালয়ের কর্মীরা একই হারে এই ছাঁটাইয়ের সম্মুখীন হবেন, তবে লন্ডন ও রটারডামের কর্মীরা বেশি সংখ্যায় ছাঁটাই হবেন।
এক ভিডিও বার্তায় ছাঁটাইয়ের বিষয়টি কর্মীদের জানানো হলে তাঁদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সেই সময় তাঁরা বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেন। এক নির্বাহী বলেন, এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের অনিশ্চয়তা বা উদ্বেগে ভোগা ঠিক হবে না, বরং এখন তাঁদের কাজে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
সেই নির্বাহী আরও বলেন, ‘নানা দুশ্চিন্তায় সময় ব্যয় না করে এখন আমাদের উচিত হবে গ্রাহকসেবা ও ব্যবসা বৃদ্ধিতে মনোযোগ দেওয়া। কে ছাঁটাই হবে আর কে হবে না, সেই বিষয় কর্মীদের হাতে নেই; বরং কাজে মনোযোগ দেওয়ার বিষয়টি তাঁদের হাতে।’
নির্বাহীর এমন মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন একাধিক কর্মী। একজন কর্মীর মন্তব্য, ‘আমি সত্যিই খুব হতাশ! কর্মীদের প্রতি যদি এই মনোভাব হয়, কীভাবে তা মেনে নেওয়া সম্ভব।’ আরেক কর্মী লেখেন, ‘এই কথা কর্মীদের মনোভাব বোঝার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ঘাটতির বহিঃপ্রকাশ। মানুষ কী ভাবছে বা মনে করছে, সে বিষয়ে সচেতনতার অভাব।’
মার্চে ইউনিলিভার আরও জানিয়েছিল, তাদের আইসক্রিমের ব্যবসা পৃথক করা হবে। আইসক্রিম থেকে ইউনিলিভারের ১৬ শতাংশ রাজস্ব আয় হয়; কিন্তু এই পণ্যের বিক্রয় প্রবৃদ্ধি অন্যান্য পণ্যের চেয়ে অনেক কম, বিশেষ করে সৌন্দর্য ও সুস্থতাসংক্রান্ত পণ্যের তুলনায়।
ইউনিলিভার তখন জানায়, সারা বিশ্বে ৭ হাজার ৫০০ কর্মী ছাঁটাই করা হবে, যদিও তারা সুনির্দিষ্টভাবে বলেনি, কোথায় কত কর্মী ছাঁটাই করা হবে। সারা বিশ্বে ইউনিলিভারের ১ লাখ ২৮ হাজার কর্মী আছে।
গত কয়েক বছরে বিশ্বের প্রায় সব বড় কোম্পানিতেই কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। মূলত মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অনেক কোম্পানির মুনাফা কমে যাওয়া এবং প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বেড়ে যাওয়ার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।