বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানি হওয়ার পরপরই এনভিডিয়ার শেয়ার ছেড়ে দিতে শুরু করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। এর জেরে শীর্ষস্থান হারায় তারা। তবে গতকাল মঙ্গলবার আবার শেয়ারের দাম বেড়েছে এই চিপ নির্মাতা কোম্পানির।
গতকাল এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ, যদিও এর আগে টানা তিন দিন এই কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। সিএনএন জানায়, তিন দিন ধরে শেয়ারের দাম কমার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। সেটা হলো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপ্লবে এনভিডিয়া কোম্পানি যে নেতৃত্বস্থানীয় আসনে ছিল, সেই জায়গা তারা হারাতে বসেছে কি না।
ডয়েশ ব্যাংকের গবেষণা কৌশলবিদ জিম রিড এক নোটে বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ভবিষ্যৎ যুগ এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার; কিন্তু গত কয়েক মাসে এআই নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে অতি উত্তেজনা দেখা গেছে।’
গত ১৮ জুন এনভিডিয়ার বাজার মূলধন ৩ লাখ ৩৪ হাজার কোটি ডলারে উঠে যায়, এর মধ্য দিয়ে মাইক্রোসফটকে হটিয়ে এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানিতে পরিণত হয়। কিন্তু পরের তিন দিন শেয়ারের দাম কমায় এনভিডিয়ার বাজার মূলধন ৪৩০ বিলিয়ন বা ৪৩ হাজার কোটি ডলার কমে যায়।
এই কয়েক দিনে ক্ষতি যতটা হয়েছিল, তার পুরোটা এনভিডিয়া কাটিয়ে উঠতে পারেনি। গতকাল এনভিডিয়ার বাজার মূলধন ছিল ৩ দশমিক ১০ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার। এখন তারা দামি কোম্পানির তালিকায় তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে। প্রথম স্থানে আছে মাইক্রোসফট আর দ্বিতীয় স্থানে আছে অ্যাপল, তাদের বাজার মূলধন যথাক্রমে ৩ লাখ ৩৫ হাজার ও ৩ লাখ ২১ হাজার কোটি ডলার।
বাজার–বিশ্লেষকেরা বলছেন, এনভিডিয়ার ক্ষেত্রে যা দেখা যাচ্ছে, তা হলো রীতিমাফিক উত্থান-পতন। যে কোম্পানির শেয়ারের দাম দ্রুত বাড়ে, সেই কোম্পানির শেয়ারের দাম আবার হঠাৎ কমেও যায়।
ওয়াল স্ট্রিটে এনভিডিয়ার শেয়ারের দামে রীতিমতো উল্লম্ফন হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে এই কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৬১ শতাংশ। তারা মূলত এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় প্রয়োজনীয় চিপ সরবরাহ করে; জেনারেটিভ এআইয়ের চিপও তারা সরবরাহ করে। যে চ্যাটজিপিটির কার্যক্ষমতা দেখে মানুষের তাক লেগে যাচ্ছে, সেই চ্যাটজিপিটির শক্তি জোগাচ্ছে এনভিডিয়ার চিপ।
প্রসেসরের জগতে আরও কিছু কোম্পানি আছে। কিন্তু বাজার-বিশ্লেষকেরা বলেন, এনভিডিয়ার প্রসেসরের মান অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে ভালো। সে জন্য তারা প্রসেসর সরবরাহ করে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। অনেক বিনিয়োগকারী মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে যে প্রতিযোগিতা চলছে, তা থেকে সবচেয়ে লাভবান হচ্ছে এনভিডিয়া।
বিশ্বের দামি ১০টি কোম্পানির মধ্যে সাতটি এখন প্রযুক্তি কোম্পানি; এদের একত্রে ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন বলা হয়। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গড় লেনদেনের চেয়ে এদের লেনদেন ছিল বেশি। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের ২৪ দশমিক ২ শতাংশ উত্থান হয়েছে, যেখানে এ সাতটি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে ১০০ শতাংশের বেশি।
গত সোমবার প্রকাশিত ডয়েশ ব্যাংকের এক নোটে বলা হয়েছে, এ সাতটি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেশ অনেকটা বৃদ্ধির কারণে বাজারে কেন্দ্রীভবনের হার বেড়েছে। অর্থাৎ একগুচ্ছ কোম্পানির প্রভাব বেড়েছে, বিশেষ করে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ইক্যুইটি রিটার্নে এনভিডিয়ার স্টক মূল্যের বড় প্রভাব পড়েছে।
গতকাল এনভিডিয়ার স্টকের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সূচক নাসডাকের উত্থান হয়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং এসঅ্যান্ডপি সূচকের উত্থান হয়েছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। তবে ডাও সূচকের পতন হয়েছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।