আপাতদৃষ্টে থ্রেডস ইলন মাস্কের সোশ্যাল নেটওয়ার্ক টুইটারের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। টুইটারের সঙ্গে এর মিল থাকলেও ব্যাপারটিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে আহ্বান জানিয়েছেন মেটার প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। তিনি আরও বলেছেন, ‘থ্রেডস যদি টুইটারের ক্ষতি করে, তা-ও করবে সহৃদয়তার সঙ্গে।’ থ্রেডস অ্যাকাউন্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা এটিকে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহানুভূতিপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে তৈরির চেষ্টা করছি।’
এদিকে থ্রেডসের বিষয়ে টুইটারের ইতিবাচক নয়-এর সমালোচনা করে মার্ক জাকারবার্গ বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হচ্ছে অ্যাপটির সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। টুইটার ইতিবাচক না থাকার কারণে প্রত্যাশিত সফলতা পায়নি। টুইটার দাবি করেছে, থ্রেডস অ্যাপটি তাদের নকশা অনুকরণ করে টুইটারের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ক্ষতি করেছে, তাই মেটার বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বলেছে টুইটার।
নিজেকে মুক্ত বাকের প্রবক্তা দাবি করা মাস্ক যখন গত অক্টোবরে ৪৪ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে টুইটার কিনে নেন, তখন দুটি কারণে তিনি সমালোচনার স্বীকার হন।
প্রথমত, চাকরি থেকে কর্মীদের ছাঁটাই করা; দ্বিতীয়ত, ব্যবহারকারীদের টুইট দেখার ওপর সীমাবদ্ধতা চাপিয়ে দেওয়া। এসব সিদ্ধান্তের কারণে টুইটারের কর্মক্ষমতা কমেছে। নারীবিদ্বেষী বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব অ্যান্ড্রু টেটের অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি সাংবাদিকদের একতরফাভাবে নিষিদ্ধ করে আবার তাঁদের অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দিয়ে মুক্তমনা ব্যবহারকারীদের সমালোচনার শিকার হন ইলন মাস্ক।
বাজার গবেষণা সংস্থা মিন্টেলের প্রযুক্তি বিশ্লেষক রেবেকা ম্যাকগ্রা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, বেশির ভাগ অ্যাপ ব্যবহারকারী ঐতিহাসিকভাবে পছন্দের প্ল্যাটফর্ম সহজে পরিবর্তন করতে চায় না, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এটি থ্রেডসের জন্য ভালো হবে না। তিনি আরও বলেন, মাস্ক টুইটারের কর্তৃত্ব গ্রহণের পর যেভাবে একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন এবং সে কারণে যেভাবে ব্যবহারকারীরা টুইটার ছেড়ে গেছেন, তাতে জাকারবার্গের থ্রেডসের বাজার ধরার সুযোগ আছে।
থ্রেডস অ্যাপটি বাজারে আসার পরও নানা ধরনের সমালোচনার শিকার হয়েছে। ইনস্টাগ্রামের সঙ্গে অ্যাপটির সংযোগ থাকার কারণে শিশুরা ক্ষতিকর কনটেন্ট বা আধেয়র সম্মুখীন হতে পারে বলে সমালোচনা করেছে ইন্টারনেট সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা মলি রোজ ফাউন্ডেশন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, লিংকডইনের সঙ্গে থ্রেডস সংযুক্ত করা হয়েছে মূলত স্বল্প সময়ের মধ্যে অ্যাপটিকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে। থ্রেডস চালু করার কয়েক ঘণ্টা পর মার্ক জাকারবার্গ জানান, নতুন প্ল্যাটফর্মটিতে তিন কোটি মানুষ যোগ দিয়েছেন। এর ব্যবহারকারী ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছে মেটা।
থ্রেডস কার্যত মাইক্রো ব্লগিং সাইট। এর প্রতিটি পোস্টে সর্বোচ্চ ৫০০টি ক্যারেক্টার লেখা যায়, যেখানে টুইটারে লেখা যায় ২৮০ ক্যারেক্টার। সেই সঙ্গে টুইটারে ছোট ভিডিও, ছবি, লিংক ইত্যাদি যুক্ত করা যায়। এর ফলে থ্রেডসের মূল প্রতিযোগিতা টুইটারের সঙ্গেই হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। এ ছাড়া আরও ধারণা করা হচ্ছে, থ্রেডসের নতুন গ্রাহকদের একাংশ টুইটার থেকে এসেছেন, যাঁরা মাস্কের খ্যাপাটে কার্যক্রমের কারণে টুইটার ছেড়েছিলেন।