ডলারের বিকল্প চায় বলিভিয়াও, চায় চীনের ইউয়ানে বাণিজ্য

চীনা মুদ্রা ইউয়ান
ছবি: এএফপি

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের বাইরে বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের পক্ষে লাতিন আমেরিকার অনেক দেশই বেশ কিছু দিন ধরে সরব। তাতে এখন যোগ দিয়েছে বলিভিয়া। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, বলিভিয়ার সরকার বিদেশের সঙ্গে লেনদেনে মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ডলারের বিকল্প হিসেবে আন্দিজ পর্বতমালা অঞ্চলের দেশটির সরকারের সবচেয়ে পছন্দের মুদ্রা চীনের ইউয়ান।

রাজধানী লা পাজে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলিভিয়ার অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী মার্সেলো মন্টেনেগ্রো বলেন, ‘বলিভিয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এমন একটি ধারা অনুসরণ করছে, যেখানে লেনদেনের ক্ষেত্রে আরও বেশি করে ইউয়ানের ব্যবহার হচ্ছে।’

বলিভিয়া মাসের পর মাস ধরে প্রচণ্ড ডলার–সংকটে ভুগেছে। এর অন্যতম কারণ, দেশটির প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি কমে গেছে। বিদেশি মুদ্রা পেতে দেশটির জন্য গ্যাস রপ্তানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে ২০১৪ সালে বলিভিয়ার যেখানে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার, সেখানে সম্প্রতি তা ৪০০ কোটি ডলারে নেমে আসে।

বলিভিয়ার মুদ্রা বলিভিয়ানোর মূল্য স্থির করা হয় মার্কিন ডলারের বিপরীতে। রিজার্ভ কমে যাওয়ায় দেশটির অর্থনীতিতে যেমন আর্থিক চাপ তৈরি হয়েছে, তেমনই ডলারের বিপরীতে নিজস্ব মুদ্রার দাম ঠিক করার এই পদ্ধতিতেও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

মার্সেলো মন্টেনেগ্রো বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে চীনের আবির্ভাব ঘটেছে। আর একটি বড় রপ্তানিকারক দেশ কোন মুদ্রায় তার পণ্যের দাম নিতে চাইবে? না, ডলারে নয়, বরং নিজের মুদ্রায়।’

গত ফেব্রুয়ারি থেকেই বলিভিয়ার রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংকো ইউনিয়ন’–এর মাধ্যমে ইউয়ান মুদ্রা ব্যবহার করে আমদানি ও রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ার মুদ্রা রুবল ব্যবহার করা যাচ্ছে মার্চ মাস থেকে।

বলিভিয়ার অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, মে মাস থেকে শুরু করে জুলাই পর্যন্ত বলিভিয়া ২৭ কোটি ৮০ লাখ ইউয়ান মূল্যের পণ্যের বৈদেশিক বাণিজ্য করেছে। এই অর্থ ৩ কেটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ, যা দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্যের ১০ শতাংশের মতো।

বলিভিয়ায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত মিখাইল লেদেনেভ বলেন, মস্কোর ওপরে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ব্যাংকো ইউনিয়ন ও রাশিয়ার গাজপ্রম ব্যাংকের মধ্যে যে লেনদেন হয়েছে, তা ‘রাশিয়ার কোম্পানিগুলোকে এই বাজারে কাজ করতে’ সহায়তা করেছে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

চীন ও রাশিয়া বলিভিয়ায় লিথিয়াম সম্পদের উন্নয়নে আরও বেশি অর্থ বিনিয়োগ করছে। বলিভিয়ায় বিপুল পরিমাণ লিথিয়ামের মজুত রয়েছে, কিন্তু এখনো তার উত্তোলন হয়নি। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরিতে লিথিয়ামের ব্যবহার হয় এবং চীন ও রাশিয়া এই খনিজের নিজস্ব চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করছে।

চলতি বছরের আরও আগের দিকে বলিভিয়া লিথিয়াম নিয়ে চীনের সঙ্গে দুটি ও রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। মার্সেলো মন্টেনেগ্রো বলেন, সব মিলিয়ে এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হবে ২৮০ কোটি মার্কিন ডলার, যে বিনিয়োগের একটি অংশ ইউয়ানে হতে পারে।

এ ছাড়া চীনের কাছে বলিভিয়া সরকারের যে ঋণ রয়েছে, তা পরিশোধেও চীনা মুদ্রা ব্যবহার করা হতে পারে। বলিভিয়ার মন্ত্রী বলেন, লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে বাণিজ্য সংহতিকরণেও ইউয়ানের ব্যবহার হতে পারে। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা এরই মধ্যে বাণিজ্যের জন্য ইউয়ানের ব্যবহার সহজ করেছে।