অর্থনীতির দুর্দশা

যুক্তরাজ্যে পারিবারিক আয় কমবে ২০০০ পাউন্ড

দুর্যোগের এ সময়ও অতিধনীদের আয় বাড়বে—রেজল্যুশন ফাউন্ডেশন এমন কথাই বলছে। 

  • ২০২২ ও ২০২৩—এই দুই বছরে যুক্তরাজ্যের দরিদ্রতম পরিবারের বার্ষিক আয় ৪ শতাংশ এবং আয়ের দিক থেকে দ্বিতীয় সারির মানুষের আয় ৯ শতাংশ কমবে।

পাউন্ড

যুক্তরাজ্যের সাধারণ মানুষ একভাবে মরেই আছে। তার ওপর একের পর এক খাঁড়ার ঘায়ে একেবারে বিপর্যস্ত দেশটির সাধারণ মানুষের জীবন। সেই যে ব্রেক্সিট থেকে শুরু হয়েছে দুর্দশা, এখনো তার জের চলছে। আরও এক বছর তা চলবে বলেই মনে করছে যুক্তরাজ্যের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রেজল্যুশন ফাউন্ডেশন।

এক জরিপে রেজ্যুলেশন ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে পারিবারিক বার্ষিক গড় আয় ২ হাজার পাউন্ডের বেশি কমবে। বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে সে দেশের মানুষের গড় আয় ৩ শতাংশ এবং আগামী অর্থবছরে অর্থাৎ এ বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত মানুষের আয় কমবে ৪ শতাংশ। এতে দৈনন্দিন আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাবে সাধারণ মানুষ।

তবে দুর্যোগের এ সময়ও অতিধনীদের আয় বাড়বে—রেজ্যুলেশন ফাউন্ডেশন এমন কথাই বলছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

গত বছর যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি একাধিকবার রেকর্ড ভেঙেছে। এর মধ্যে আবার দেশটির বিভিন্ন খাতের শ্রমিকেরা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মজুরি বৃদ্ধির দাবি তুলেছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে রেজল্যুশন ফাউন্ডেশন এমন শঙ্কার কথা জানাল।

এদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমে আসছে। ফলে আগামী কয়েক মাসে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসবে বলেই ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা। তবে অনেক পরিবারেই তার প্রভাব পড়বে না। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, দেশটির সরকার এখন জ্বালানি খাতে যে ভর্তুকি দিচ্ছে, তা একসময় কমাতে বাধ্য হবে। এখন যেখানে পরিবারের বার্ষিক জ্বালানির বিল ২ হাজার পাউন্ড—২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা ২ হাজার ৮৫০ পাউন্ডে উন্নীত হতে পারে। ফলে মাথাপিছু মূল্যস্ফীতির হার কমলেও বাস্তবে মানুষের জীবনে তার প্রভাব অনুভূত হবে না। সেই সঙ্গে পারিবারিক আয় হ্রাসের যে কথা জানাল রেজল্যুশন ফাউন্ডেশন, তাতে মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হবে বলেই ধারণা করা যায়।

এদিকে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে যুক্তরাজ্য সরকার আয়কর হার নির্ধারণ করে দিয়েছে। এতে আগামী এপ্রিল মাস নাগাদ মধ্যবিত্তের আয়কর বার্ষিক ৭০০ পাউন্ড বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে বন্ধকি ঋণের সুদহার বেড়ে যাবে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির প্রায় ৩০ লাখ মানুষের প্রকৃত আয় আগামী দুই বছরের জন্য ১২ শতাংশ কমে যাবে।

২০২২ ও ২০২৩—এই দুই বছরে যুক্তরাজ্যের দরিদ্রতম পরিবারের বার্ষিক আয় ৪ শতাংশ এবং আয়ের দিক থেকে দ্বিতীয় সারির মানুষের আয় ৯ শতাংশ কমবে।

তবে শীর্ষ ৫ শতাংশ ধনীর আয় আবার বাড়ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে, তাতে সঞ্চয়ের সুদহার ও বিনিয়োগের লভ্যাংশ বেড়েছে। আর যুক্তরাজ্যের মতো দেশে ধনী ছাড়া আরও কারও পক্ষে সঞ্চয় বা বিনিয়োগ করা সম্ভব হয় না।

বাস্তবতা হচ্ছে, খাদ্যমূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশের মানুষ পাতের খাবার কমাতে বাধ্য হচ্ছেন।এমনকি সেভ দ্য চিলড্রেনের মতো এনজিওকে তৎপর হতে হয়েছে সে দেশে।সেভ দ্য চিলড্রেনের কর্মীরা জানাচ্ছেন, যুক্তরাজ্যের পরিবারগুলো ফল ও শাকসবজি কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।

এমনকি শিশুদের জন্য গরম কাপড় কিনতেও কষ্ট হচ্ছে তাদের।এক সাহায্যগ্রহীতা পরিবারের কথা বলেছেন তাঁরা, যে পরিবার সম্প্রতি সোশ্যাল হাউজিং বা সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্থান পেয়েছে, কিন্তু তারা বাড়ির নিচতলায় কার্পেট বিছাতে পারেনি।