অবৈধ ও কালোবাজারি তৎপরতার কারণে পাকিস্তানের অর্থনীতির বড় ক্ষতি হচ্ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এসিই মানি ট্রান্সফারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কালোবাজারি, মুদ্রা পাচার, সোনার চোরাচালান, তেল চোরাচালান ও মার্কিন ডলার পাচারের কারণে প্রতিবছর পাকিস্তানের ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে।
অর্থনীতিতে এ ধরনের গোপন তৎপরতার কারণে পাকিস্তানের অর্থনীতির বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পিটিআইয়ের সূত্রে এ খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
প্রতিবেদনের ভাষ্য, অনানুষ্ঠানিক পথে মুদ্রা বা ডলার আসা–যাওয়ার কারণে বিনিময় হার কার্যকারিতা হারাচ্ছে। এ কারণে মুদ্রার দরপতন ঘটছে। এতে জ্বালানি তেলসহ আমদানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে।
এ ছাড়া এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে মুদ্রানীতির কার্যকারিতা নষ্ট হয় এবং পরিণামে আর্থিক ব্যবস্থার ওপর মানুষের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ধরনের গোপন তৎপরতার কারণে কেবল যে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়, তা নয়; বরং একধরনের ছায়া অর্থনীতির সৃষ্টি হয়। এ কারণে অর্থনীতিতে কখন কোথায় কী ঘটছে, তার হদিস পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি কয়েক বছরে পাকিস্তানের মুদ্রার বিনিময় হার অনেকটাই ওঠানামা করেছে। এ কারণে দেশটির অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কেবল বেড়েছে। তবে অবৈধ কার্যক্রম রোধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ায় ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি মুদ্রা রুপির আন্তব্যাংক দর ২৮২ রুপিতে স্থিতিশীল হয়েছে, যা একসময় প্রায় ৩০০ ডলারে উঠে গিয়েছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে জরুরি বিষয় হলো, চোরাচালান বন্ধে কঠোর অঙ্গীকার।
দেশটির এসিই গ্রুপ অব কোম্পানিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রশিদ আশরাফ পিটিআইকে বলেছেন, সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে শাসনব্যবস্থা। শাসনব্যবস্থার উন্নতি হলে আর্থিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশের উন্নতি হবে; দেশের আর্থিক বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে এবং পরিণামে প্রবৃদ্ধির পালে হওয়া লাগবে।
পাকিস্তানের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সোনা চোরাচালান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সোনার বাজারের আকার প্রায় ৭১০ কোটি ডলারের, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র সাড়ে ৯ কোটি ডলার মূল্যের সোনার ঘোষণা রাজস্ব কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া হয়। স্বর্ণসংক্রান্ত লেনদেনের পুরোটা সরকারের খাতায় নিয়ে আসা গেলে বছরে ৫০ কোটি ডলারের রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব।
প্রতিবেদনে আমদানি নিষেধাজ্ঞার অপ্রত্যাশিত ফলাফল উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য ছিল ভালো। বলা হয়েছে, এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে ছায়া অর্থনীতির জন্ম হয়েছে। চোরাচালান, ভুল তথ্য ও এক পণ্য দেখিয়ে আরেক পণ্য নিয়ে এসে আমদানি নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এসব কারণে পাকিস্তানের অর্থনীতির বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। এতে বেকারত্বের হার অনেকটা বেড়ে যেতে পারে; এমনকি ২০২৩ সালের শেষ দিকে বেকারত্ব ২০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।