চীনে ভোজ্যতেলের মান নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বলা হয়েছে, জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকারে বিষাক্ত রাসায়নিক পরিবহনের পর যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করেই ভোজ্যতেল পরিবহন করা হয়েছে। চীন সরকার এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে।
এই অভিযোগ ওঠার পর তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। বিবিসি জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ ভোজ্যতেলের মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। খাবারে ভেজাল ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বেইজিংয়ের সরকারি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, জ্বালানি তেল পরিবহনের পর ট্যাংকার পরিষ্কার করার আগেই সেখানে ভোজ্যতেল ও সিরাপ পরিবহন করা হয়েছে। এক গাড়িচালকের সূত্রে সংবাদে বলা হয়েছে, জ্বালানি তেলের ট্যাংকারে ভোজ্য তেল পরিবহন একেবারেই নৈমিত্তিক বিষয় ছিল; বিষয়টি ছিল অনেকটা ‘উন্মুক্ত রহস্য’।
এমনিতেই চীনে খাবারের মান রক্ষায় সরকারের তৎপরতা নিয়ে মানুষের অনাস্থা আছে। এই ঘটনা মানুষের আস্থায় আরও বড় চিড় ধরিয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটি সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।
চীনে এক্স ও ফেসবুকের মতো পশ্চিমা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চলে না। এক্সের সমতুল্য সামাজিক মাধ্যম উইবোতে গত কয়েক দিন ধরে এ নিয়ে পোস্ট দেওয়া হচ্ছে; কোটি কোটি মানুষ সেই পোস্ট দেখছে। মানুষের মন্তব্য এ রকম: ‘খাদ্যনিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’; ‘সাধারণ মানুষ হিসেবে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকাই সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয়’।
এর আগে ২০০৮ সালেও চীনে গুঁড়া দুধে মেলামাইন ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই ঘটনা সানলু মিল্ক স্ক্যান্ডাল নামে পরিচিত। এতে অন্তত ছয় শিশু মারা যায় এবং তিন লাখ শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। এবারের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেকজনের মন্তব্য এ রকম, ‘এবারের ঘটনা সানলু মিল্ক স্ক্যান্ডালের চেয়েও ভয়াবহ; স্রেফ একটি বিবৃতি দিয়ে এই ঘটনার সমাধান করা যাবে না।’
চীনে ট্যাংকার ব্যবহারের বিধি নির্ধারিত নয়। সে কারণে তেল পরিবহনের পরপরই ভোজ্যতেল পরিবহনে কাগজে-কলমে বাধা নেই। এই সুযোগ নিচ্ছেন ট্যাংকারের মালিকেরা। চীনের বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে, যেমন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সিনোগ্রেইন ও হোপফুল গ্রেইন অ্যান্ড অয়েল করপোরেশন।
সিনোগ্রেইন বলেছে, খাদ্য নিরাপত্তা বিধি ঠিকঠাক অনুসরণ করা হচ্ছে কি না, সেটা তারা খতিয়ে দেখছে। যে ট্রাকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ পাওয়া যাবে, সেই ট্রাক তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে নেওয়া হবে। অন্যদিকে হোপফুল গ্রেইনের প্রতিনিধি সরকারি সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসকে বলেছেন, এ বিষয়ে বিশদ আত্ম-অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
চীন সরকার বলেছে, খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক কর্মকর্তারা এসব অভিযোগের তদন্ত করবেন। যাঁরা এই অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণিত হবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে শিগগিরই সরকারি তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভি বলেছে, ‘অবৈধ কোম্পানি ও যারা এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁদের আইনের আওতায় নিয়ে নিয়ে এসে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এদিকে যে দুটি প্রদেশে এই অভিযোগ উঠেছে সেই হুবেই ও তিয়ানজিন প্রদেশের সরকার বলেছে, স্থানীয়ভাবেও বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।