ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘাতের জেরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞাও দিয়ে রেখেছে ইইউ। কিন্তু এসব বিধিনিষেধ সত্ত্বেও চলতি বছর রাশিয়া ভ্রমণে ইচ্ছুক ইউরোপের পর্যটকদের ভিসার আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার বিভাগের প্রধান আলেক্সি ক্লিমভ গতকাল রোববার দেশটির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদ সংস্থা আরআইএ নভোস্তিকে এসব কথা জানিয়েছেন বলে রাশিয়া টুডের খবরে জানানো হয়েছে।
আলেক্সি ক্লিমভ জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদেশি মিশনগুলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মোট ২ লাখ ২৫ হাজার ভিসা দিয়েছে। এর মধ্যে ট্যুরিস্ট বা পর্যটক ভিসার সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার। এই সংখ্যা ২০২২ সালের প্রথম ৯ মাসের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বেশি।
সম্প্রতি বাল্টিক দেশগুলো (এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়া) থেকে ভিসা আবেদনের একটি লক্ষণীয় বৃদ্ধি ঘটেছে বলে জানান ক্লিমভ। এর মধ্যে গত জুন ও জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে লিথুনিয়ার নাগরিকদের দেওয়া ভিসার সংখ্যা ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে; আর এস্তোনিয়ার নাগরিকদের জন্য দেওয়া ভিসার সংখ্যা বেড়ে তিন গুণ হয়েছে।
তবে ইউক্রেন যুদ্ধের আগের তুলনায় ভিসা নিবন্ধনের হার এখনো অনেক কম বলে জানিয়েছেন আলেক্সি ক্লিমভ। যেমন ২০১৯ সালের প্রথম ৯ মাসে রাশিয়া ইইউ নাগরিকদের ১১ লাখ পর্যটক ভিসা দিয়েছিল। আর ওই সময়ে ইইউতে ইস্যু করা রাশিয়ার মোট ভিসার সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ।
আবার চলতি বছরের ৯ মাসে রাশিয়ায় পর্যটক ভিসার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ইউরোপ থেকে কূটনৈতিক, চাকরি, ছাত্র ও অন্যান্য ক্যাটাগরির ভিসার সংখ্যা ১০ শতাংশ কমেছে।
আলেক্সি ক্লিমভ বলেন, ইউরোপীয় ভ্রমণকারীদের জন্য রাশিয়া সব সময়ই ‘উন্মুক্ত’ ও ‘অতিথিপরায়ণ’ রয়েছে। তবে রাশিয়ার নাগরিকদের প্রতি ইইউ জোটের মনোভাব তেমন নয়। এ কারণে রাশিয়ার নাগরিকেরা ইইউ দেশগুলোতে ভিসা পেতে এবং তাদের ভূখণ্ডে প্রবেশের ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায় রাশিয়া। এরপর রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানা নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকে ইউরোপের দেশগুলো। যেমন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ইইউ, আইসল্যান্ড, লিখটেনস্টেইন, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড একতরফাভাবে রাশিয়ার সঙ্গে ভিসা সুবিধা চুক্তি (ভিএফএ) স্থগিত করে। ফলে রাশিয়ার নাগরিকদের সেসব দেশের ভিসা পেতে খরচ ও জটিলতা বৃদ্ধি পায়।
রাশিয়ার নাগরিকদের আগে ইইউর শেঙেন ভিসার জন্য ৩৫ ইউরো দিতে হতো, যা এখন বৃদ্ধি করে ৮০ ইউরো করা হয়েছে। এ ছাড়া ভিসার জন্য আবেদন করার সময় এখন আগের তুলনায় আরও বিস্তারিত তথ্য ও বেশি নথিপত্র জমা দিতে হচ্ছে। ভিসা পেতে সময়ও লাগছে বেশি।