বর্তমানে দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র ৮০০ কোটি ডলার, যা দিয়ে দুই মাসের চাহিদা মেটানোর মতো পণ্যসামগ্রী আমদানি করা সম্ভব।
পাকিস্তানে নতুন সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা, সমঝোতার চেষ্টা চলছে। এই পরিস্থিতিতে আপাতত অর্থনীতি নিয়ে তেমন উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু নিকট ভবিষ্যতে দেশটিতে পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টির ঝুঁকি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ রকম অবস্থায় বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে পাকিস্তান খুব দূরে থাকতে পারবে না। বহুজাতিক সংস্থাটির কাছ থেকে আগের চেয়েও বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়াই হবে পাকিস্তানের নতুন সরকারের অগ্রাধিকার। আইএমএফ পাকিস্তানের জন্য ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। এর শেষ কিস্তি মার্চে ছাড় হওয়ার কথা। রয়টার্স সূত্রে এই সংবাদ দিয়েছে ইকোনমিক টাইমস।
গত আগস্ট মাস থেকে পাকিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আছে। আগের সরকারের ধারাবাহিকতায় তারা আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। দেশটির নতুন আইন অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়েও বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারছে।
এখন কথা হচ্ছে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক কতটা খারাপ। বর্তমানে দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে মাত্র ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা দিয়ে দুই মাসের চাহিদা মেটানোর মতো পণ্যসামগ্রী আমদানি করা সম্ভব। প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের তুলনায় এই রিজার্ভ অনেক কম হলেও এ ক্ষেত্রে গত এক বছরে তাদের উন্নতি হয়েছে। যেমন এক বছর আগেও পাকিস্তানের রিজার্ভ ছিল মাত্র ৩১০ কোটি ডলার।
আগামী দুই মাসে পাকিস্তানকে আরও প্রায় ১০০ কোটি ডলার বন্ডের অর্থ পরিশোধ করতে হবে। স্বাভাবিকভাবে তাদের রিজার্ভ কমবে। এরই মধ্যে আইএমএফের ঋণের ৭০ কোটি ডলার তাদের রিজার্ভে যুক্ত হওয়ার কথা।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মুর্তজা সাঈদ রয়টার্সকে বলেন, দেশের যে বাস্তবতা, তাতে আইএমএফের কাছ থেকে আরও একটি ঋণ জরুরি। কারণ, দেশের যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে, সেই তুলনায় রিজার্ভ অত্যন্ত কম। ফলে আইএমএফের নতুন ঋণের বিকল্প নেই।
পাকিস্তানের ঋণ–জিডিপির অনুপাত ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আইএমএফসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থাগুলোর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর দেশটির রাজস্ব আয়ের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ঋণ পরিশোধে ব্যয় করতে হবে।
বিশ্লেষণকারী সংস্থা টেলিমের বলেছে, পাকিস্তানের সমস্যা মূলত অভ্যন্তরীণ ঋণ। দেশটির যত ঋণ আছে, তার ৬০ শতাংশই অভ্যন্তরীণ এবং তাদের প্রতিবছর যত ঋণ পরিশোধ করতে হয়, তারও ৮৫ শতাংশ অভ্যন্তরীণ। দেশটির যত বিদেশি ঋণ আছে, তার বড় অংশ দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উৎস থেকে নেওয়া, যা তার মোট বিদেশি ঋণের ৮৫ শতাংশ। তবে পাকিস্তানের বন্ডেড ঋণ খুব বেশি নয়, মোট বিদেশি ঋণের মাত্র ৮ শতাংশ এবং মোট সরকারি ঋণের মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের বিভিন্ন অবকাঠামো খাতে বিপুল ঋণ দিয়েছে চীন। দেশটির মোট ঋণের ১৩ শতাংশই চীনের কাছ থেকে নেওয়া।
পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতির হার এখন ৩০ শতাংশ। চলতি বছরের শেষ দিকে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে অর্থনীতিবিদেরা পূর্বাভাস দিয়েছেন।
এদিকে রুপির আরও দরপতন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি আইএমএফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে প্রতি ডলারের দাম ৩০৫ রুপিতে উঠে যেতে পারে। যা আগামী অর্থবছরে ৩৩১ রুপি পর্যন্ত উঠতে পারে। এখন ১ ডলারে ২৭৯ পাকিস্তানি রুপি পাওয়া যায়।