টাটা গ্রুপের সদ্য প্রয়াত ইমেরিটাস চেয়ারম্যান রতন টাটা
টাটা গ্রুপের সদ্য প্রয়াত ইমেরিটাস চেয়ারম্যান রতন টাটা

রতন টাটার মৃত্যুর পর কারা হচ্ছেন টাটা সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী

রতন টাটার মৃত্যুর পর এখন প্রশ্ন উঠেছে—টাটা সামাজ্যের উত্তরাধিকারী কে হবেন? ভারতের অন্যতম ধনী রতন এন টাটা গতকাল বুধবার ৮৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি ২০ বছর দায়িত্ব পালন করে ২০১২ সালে অবসরে যান। তবে ভারতের একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি সারা বিশ্বেই সুপরিচিত ছিলেন।

রতন টাটা বিয়ে করেননি। তাঁর কোনো সন্তান নেই। বিয়ে করেননি তাঁর আপন ভাই জিমি টাটাও। তাঁরা দুজন নাভাল টাটা ও সুনি কমিসারিয়াতের সন্তান। রতন টাটার বয়স যখন মাত্র ১০ বছর, তখন তাঁর মা–বাবার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। বলা হয়ে থাকে, মা–বাবার অসুখী জীবন দেখেই দুই ভাইয়ের কেউই আর বিয়ে পথে হাঁটেননি।

টাটা পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত পারসি ধর্মের অনুসারী জামশেদজি টাটা। ১৮৭০–এর দশকে একটি কাপড়ের কারখানা স্থাপন করে তিনি শিল্পপতি হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী হীরাবাই ডাবুর এক মেয়ে ও দুই ছেলে ছিল। বড় মেয়ে ছিলেন ধুনবাই টাটা। বড় ছেলে দোবারজি টাটা ছিলেন টাটা গ্রুপের দ্বিতীয় চেয়ারম্যান। শিল্পপতি হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল। তাঁর কোনো সন্তান ছিল না।

জামশেদজি টাটার দ্বিতীয় ছেলে রতনজি টাটা। লোকহিতৈষী হিসেবে খ্যাতি পাওয়া রতনজির স্ত্রী ছিলেন নাভাজবাই টাটা। তাঁদেরও কোনো সন্তান ছিল না। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি সম্প্রসারিত টাটা পরিবারের শিশু নাভালকে দত্তক নেন। এই নাভাল পরে টাটা গ্রুপের বেশ কয়েকটি কোম্পানির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

টাটা সাম্রাজ্য

রতন টাটার সম্পদের পরিমান ৩ হাজার ৮০০ কোটি রুপি। আর টাটা গ্রুপের মূল্যমান ৩৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি রুপি। পৃথিবীর ছয়টি মহাদেশের ১০০টি দেশে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কার্যক্রম রয়েছে। জ্বালানি, গাড়ি, প্রকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তি, যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে তাদের ব্যবসা রয়েছে। বিশ্বজুড়ে টাটা কোম্পানিগুলোয় কাজ করেন আট লাখ কর্মী।

বিশাল এই ব্যবসায়ী সাম্রাজ্য পরিচালনা করার দায়িত্ব পড়বে এখন নতুন নেতৃত্বের হাতে।

উত্তরাধিকারী কারা

সুনি কমিসারিয়াতের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর নাভাল টাটা আবার বিয়ে করেছিলেন। তাঁর চেয়ে ২৬ বছরের ছোট ফরাসিভাষী সুইস নারী সিমোন ডুনেয়ারকে ১৯৫৫ সালে বিয়ে করে তিনি। সুপরিচিত সাজসজ্জার উপকরণ প্রস্তুতকারী কোম্পানি লাকমে পরিচালনা করতেন সিমোন। তাঁদের একমাত্র ছেলে নোয়েল টাটার জন্ম ১৯৫৭ সালে।

নোয়েল টাটার তিন সন্তান। মায়া, নেভিল ও লিয়া। টাটার যে পরম্পরা, এই তিনজন এর উত্তরাধিকার হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

মায়া টাটা

মায়ার বয়স ৩৪। টাটা গ্রুপে ইতিমধ্যে নিজের অবস্থান তিনি বেশ পাকাপোক্ত করেছেন। ব্রিটেনে পড়াশোনা করেছেন মায়া। টাটা অপরচুনিটিস ও টাটা ডিজিটালে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কৌশলী হিসেবে তাঁর পরিচিতি আছে। টাটা নিউ অ্যাপ চালু করার ব্যাপারে তাঁর চিন্তাভাবনা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

নেভিল টাটা

পারিবারিক ব্যবসায় নেভিল অত্যন্ত সক্রিয়। তাঁর বয়স ৩২। তাঁর স্ত্রী হলেন মানসী কিরলোসকার। টয়োটা কিরলোসকার গ্রুপের মালিক পরিবারের মেয়ে তিনি। বিশাল সব দোকান চালায় যে কোম্পানি, সেই স্টার বাজারের নেতৃত্বে রয়েছেন নেভিল। এই হাইপারমার্কেটগুলো পরিচালিত হয় ট্রেন্ট লিমিটেডের আওতায়। সে কারণে তাঁকে টাটা গ্রুপের ভবিষ্যত নেতা মনে করা হয়।

লিয়া টাটা

নোয়েল টাটার তিন সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড় লিয়ার বয়স ৩৯। টাটা গ্রুপের অতিথিসেবার ব্যবসায় তিনি নিয়োজিত। স্পেনের আইই বিজনেস স্কুল থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। তাজ হোটেলস রিসোর্ট অ্যান্ড প্যালেসেসে তিনি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে তিনি ইন্ডিয়ান হোটেলস কোম্পানি পরিচালনার দিকটি দেখাশোনা করছেন।