দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে। তবে পরিস্থিতি এখন ভালো হয়েছে। এরপরও নীতি সুদহার কমানোর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা পরিস্থিতির আরও কিছুটা উন্নতি দেখতে চান। সেই সঙ্গে শ্রমবাজারে চোখ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল।
জেরোম পাওয়েল বলেন, মূল্যস্ফীতির হার টেকসইভাবে ২ শতাংশের ঘরে নেমে আসছে—এ বিষয়ে আত্মবিশ্বাস আরও না বাড়লে নীতি সুদহার কমানো ঠিক হবে না। মঙ্গলবার সিনেট ব্যাংকিং কমিটির কাছে দেওয়া মুদ্রানীতিবিষয়ক অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেন পাওয়েল।
বাজারের প্রচলিত ধারণা হলো ফেডারেল রিজার্ভ চলতি বছরের শেষ দিকে বা এমনকি সেপ্টেম্বর মাসেই নীতি সুদহার কমাবে। কিন্তু গতকাল পাওয়েল সুনির্দিষ্ট করে কিছুই বলেননি অর্থাৎ এ বছরই যে নীতি সুদ কমানো হবে বা ঠিক কবে নাগাদ তা কমানো হবে, সে বিষয়ে।
পাওয়েল আরও বলেন, সম্প্রতি মূল্যস্ফীতির হার আরও কিছুটা কমেছে; সেই সঙ্গে আরও কিছু ভালো তথ্য-উপাত্ত হাতে এলে আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও জোরালো হবে যে মূল্যস্ফীতির হার টেকসইভাবে ২ শতাংশের ঘরে নেমে আসছে।
এদিকে আজ হাউস ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কমিটির কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবেন জেরোম পাওয়েল।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে জ্বালানি তেলের দাম হু হু করে বাড়তে শুরু করে। দেশে দেশে বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। সেই পরিস্থিতিতে ফেডারেল রিজার্ভ আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার বাড়াতে শুরু করে। তবে ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতির হার কমলে সে বছরের জুলাই মাসের পর আর নীতি সুদহার বাড়ানো হয়নি। ধারণা ছিল, চলতি বছরের মার্চ মাসেই নীতি সুদহার কমানো হবে। কিন্তু বছরের প্রথম তিন মাসে হঠাৎ করে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে গেলে সে আশার গুড়ে বালি পড়ে। ফলে সুদহার কমানোর দিনক্ষণ পিছিয়ে যায়।
জুন মাসের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস অনুসারে চলতি বছর ফেডারেল রিজার্ভ কেবল একবারই নীতি সুদ কমাতে পারে। যদিও মার্চ মাসের পূর্বাভাস ছিল, এ বছর তিনবার নীতি সুদহার কমানো হতে পারে।
বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি আবার কমছে। কিন্তু ফেডের কর্মকর্তারা সতর্ক; মূল্যস্ফীতি যে টেকসইভাবে ২ শতাংশের ঘরে নেমে আসছে, সে বিষয়ে তাঁরা আরও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ চান। জুন মাসে দেশটিতে পণ্যমূল্য বাড়েনি; যা গত বছরের নভেম্বর মাসের পর এই প্রথম। জুন মাসে ফেডের পছন্দের সূচক পারসোনাল কনজাম্পশন এক্সপেনডিচারের মান ছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ; মে মাসে যা ছিল সামান্য বেশি—২ দশমিক ৭ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার এখন আড়াই শতাংশের মতো। নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভের প্রেসিডেন্ট জন উইলিয়ামস গত সপ্তাহে ভারতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে; কিন্তু তাকে টেকসইভাবে ২ শতাংশের ঘরে নামিয়ে আনতে আরও কিছুটা পথ যেতে হবে।
শুধু মূল্যস্ফীতি নয়, নীতি সুদহার কমানোর জন্য ফেডারেল রিজার্ভ একই সঙ্গে মার্কিন শ্রমবাজারের দিকেও নজর রাখছে। গত কয়েক বছর খুব চাঙা থাকার পর সম্প্রতি এই বাজার কিছুটা থিতিয়ে এসেছে।
জেরোম পাওয়েল সিনেটকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার এখন প্রাক্-কোভিড সময়ের কাছাকাছি চলে এসেছে—শক্তিশালী কিন্তু অতিরিক্ত চাঙা নয়। ২০২০ সালের কোভিড মহামারির শুরুতে শ্রমবাজারে মন্দাভাব দেখা গেলেও পরবর্তীকালে তা খুবই জোরালোভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। এর পর থেকে শ্রমবাজারের সম্প্রসারণ চলছেই।
কিন্তু সম্প্রতি শ্রমবাজারের সেই চাঙাভাব কমেছে। জুন মাসে বেকারত্বের হার গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে বেকার ভাতার আবেদনও বেড়েছে।
সিনেট ব্যাংকিং কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর শেরউড ব্রাউন গতকাল শুনানির সময় বলেন, ‘আমার মনে হয়, ফেড এখন বেশি দেরি করলে ভালো বেতনের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আমরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছিলাম, তা অনেকটা নষ্ট হবে।’
শুনানির সময় জেরোম পাওয়েল বলেন, ফেড এখন কী ধরনের ঝুঁকির মুখে আছে, সে বিষয়ে তাঁরা সচেতন। একদিকে পরিস্থিতি পরিপক্ব হওয়ার আগেই সুদহার কমানো হলে মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যেতে পারে; আবার সুদহার কমাতে দেরি হলে বেকারত্বের হার বেড়ে যেতে পারে। এর কোনোটাই মানুষের জন্য ভালো হবে না।