ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর

রাশিয়ার জ্বালানি কারা বেশি নেয়

  • গত বছরের মার্চ মাসের তুলনায় ইইউর দেশগুলোতে রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি প্রায় ৮৫ শতাংশ কমেছে।

  • আফ্রিকার দেশগুলো গত বছরের ডিসেম্বর থেকে রাশিয়ার জ্বালানি আমদানি দ্বিগুণ করেছে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রাথমিক অভিযান তথা আক্রমণের এক বছর হয়ে গেল। এই সময়ে রাশিয়া সারা বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানির মাধ্যমে ৩১ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে। বিস্ময়কর হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এবং দেশটির ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও প্রায় অর্ধেক জ্বালানি তারাই নিয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ১৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার।

সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পরিমাণে রুশ জ্বালানি আমদানি করেছে চীন। এই সময়ে রাশিয়ার প্রতিবেশী ও অনানুষ্ঠানিক মিত্র দেশটি মোট ৬ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার মূল্যের জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি করেছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৪৯০ কোটি ডলারের অপরিশোধিত তেল, ৬১০ কোটি ডলারের প্রাকৃতিক গ্যাস ও ৫৭০ কোটি ডলারের কয়লা নিয়েছে। চীন মোট অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির ৮০ শতাংশই নিয়েছে রাশিয়া থেকে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানা নিষেধাজ্ঞায় শামিল থাকলেও দেশটির প্রায় অর্ধেক জ্বালানিই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো আমদানি করেছে।

গত এক বছরে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির দ্বিতীয় শীর্ষ আমদানিকারক হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম অর্থনীতি জার্মানি। চীনের বিরুদ্ধে নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপে শামিল থাকলেও জার্মানি ২ হাজার ৬১০ কোটি ডলারের জ্বালানি আমদানি করেছে চীন থেকে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৩০ কোটি ডলারের অপরিশোধিত তেল, ১ হাজার ২১০ কোটি ডলারের প্রাকৃতিক গ্যাস ও ৭০ কোটি ডলারের কয়লা নিয়েছে।

রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানিতে তৃতীয় স্থানে রয়েছে তুরস্ক। দেশটি নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) নামের সামরিক জোটের সদস্য হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য নয়। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে রাশিয়া থেকে ২ হাজার ৫৯০ কোটি ডলারের জ্বালানি আমদানি করেছে তুরস্ক। দেশটি ইইউর অংশ না হওয়ায় রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞায় তুরস্কের ক্ষেত্রে এই জোটের প্রভাব কম। সে জন্য মনে করা হচ্ছে, জ্বালানি আমদানিতে শিগগির জার্মানিকে ছাড়িয়ে যেতে পারে তুরস্ক।

রাশিয়া থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানিতে শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নিয়েছে ইইউর সদস্যদেশগুলো। তবে ইউরোপের বাকি দেশগুলো রাশিয়ার কয়লা ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলসহ পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা ও মূল্যসীমা মোটামুটি মেনে আসছে। অর্থাৎ এসব দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি কমিয়েছে।

ইইউর সদস্যদেশগুলো আমদানি করলেও কিন্তু রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে রপ্তানি আয় কমে যাচ্ছে। ইইউর নিষেধাজ্ঞা ও মূল্যসীমা বেঁধে দেওয়ার কারণে এমন হয়েছে। এতে ইইউর ৮৫ শতাংশ সদস্যদেশেই রাশিয়ার দৈনিক জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানি কমেছে। যেমন, ২০২২ সালের মার্চে এসব দেশ যেখানে রাশিয়া থেকে দৈনিক সর্বোচ্চ ৭৭ কোটি ৪০ লাখ ডলারের জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি করত, সেখানে এ বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি তা কমে ১১ কোটি ৯০ লাখ ডলারে নেমে এসেছে।

এদিকে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বাড়িয়েছে ভারত। গত বছর রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের দিনে যেখানে রাশিয়া থেকে ভারতের জ্বালানি আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩০ লাখ ডলার; সেখানে গত ২২ ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে।

একইভাবে আফ্রিকার দেশগুলো গত বছরের ডিসেম্বর থেকে রাশিয়ার জ্বালানি আমদানি দ্বিগুণ করেছে। তবে এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রপ্তানি সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ কমেছে।

সূত্র: এলিমেন্টস ভিজ্যুয়ালক্যাপিটালিস্ট