ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার মান সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। গত শুক্রবার ডলারের বিপরীতে রুপির দর এই প্রথম ৮৪ ছাড়িয়ে যায়। আজ সোমবার রুপির দর সামান্য বাড়লেও তা ৮৪–এর ঘরেই আছে। টানা কয়েক দিন ধরেই রুপির এই দরপতন হচ্ছে।
গত শুক্রবার এক ডলারের বিপরীতে রুপির মান ৮৪ দশমিক ০৯–এ নেমে যায়। পরে দিনশেষে তা ৮৪ দশমিক ০৭ রুপিতে ওঠে। আজ সোমবার সকালে রুপির দর সামান্য বেড়ে ৮৪ দশমিক ০৫–এ উঠে আসে। গত বুধবার ডলারের বিপরীতে রুপির মান ছিল ৮৩ দশমিক ৯৮ রুপি। এভাবে টানা ভারতীয় মুদ্রার দরপতন হওয়ায় ভারতের বাজারসংশ্লিষ্ট মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। খবর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ডলারের বিপরীতে ৮৩ দশমিক ৯৯ রুপিতে নেমেছিল ভারতীয় মুদ্রা। এরপর রুপির দরপতনের ধারা থেমে যায় এবং ডলারের বিপরীতে তার দর বাড়তে থাকে। কিন্তু ভারতের শেয়ারবাজারের সূচকের পতন শুরু হলে আবার রুপির দরপতন শুরু হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি পুঁজি বেরিয়ে যাওয়ার কারণে ভারতীয় মুদ্রার দরপতন হচ্ছে। প্রায় এক মাস ধরে ভারতের শেয়ারবাজারে সূচকের পতন হচ্ছে। এ কারণে রুপির মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
রুপির আরও দরপতন হতে পারত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সরকারি পরিসংখ্যান প্রকাশিত হওয়ার পর সেই পরিস্থিতি আর সৃষ্টি হয়নি। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বেকার ভাতার আবেদন বেড়েছে; কিন্তু একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হারও ছিল প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি আগের মাসের চেয়ে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে, যদিও পূর্বাভাস ছিল, তা হবে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। ভোক্তা মূল্য সূচকও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের ছয়টি শক্তিশালী মুদ্রার সাপেক্ষে প্রণীত দ্য ইউএস ডলার ইনডেক্সের মান পড়ছে। অর্থাৎ অন্যান্য শক্তিশালী মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দরপতন হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রুপির বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা স্তিমিত হয়েছে।
ভারতের শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। গত এক মাসে এই প্রবণতা অনেকটা শক্তিশালী হয়েছে। চীন অর্থনীতি চাঙা করতে আবারও বড় ধরনের প্রণোদনা দিয়েছে। এই বাস্তবতায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতের বাজারে শেয়ার বিক্রি করে চীনের বাজারে বিনিয়োগ করার নীতি গ্রহণ করেছে। অক্টোবরের প্রথম ১২ দিনে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন পর্যন্ত ৫৮ হাজার ৭১১ কোটি রুপির শেয়ার বিক্রি করেছেন।
এদিকে ৪ অক্টোবর শেষ হওয়া সপ্তাহে ভারতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। সেই সপ্তাহে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭০ কোটি ৯০ লাখ ডলার কমে ৭০ হাজার ১১৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারে নেমে আসে। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার তথ্যানুসারে, আগের সপ্তাহে রিজার্ভ বেড়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৪৮৮ কোটি ৫০ লাখ ডলারে পৌঁছায়। ডলার ছাড়াও ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে আরও আছে ইউরো, পাউন্ড ও ইয়েনের মতো মুদ্রা। এ ছাড়া স্বর্ণের মজুতও কমেছে।