আদানির বক্তৃতা

২০৩০ সালে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে ভারত

দ্রুত উত্থান হচ্ছে ভারতের অর্থনীতির। স্বাধীনতার পর ৫৮ বছর লেগেছে ১ লাখ কোটি ডলারের জিডিপি অর্জন করতে, এরপর ১২ বছর লেগেছে ২ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতি হতে, তবে সেখান থেকে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি হতে লেগেছে মাত্র ৫ বছর। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে।

চীন একসময় বিশ্বায়নের পুরোধা হিসেবে বিবেচিত হলেও ক্রমে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদী আবেগ, সরবরাহব্যবস্থার ঝুঁকি অপসারণ ও প্রযুক্তিগত বাধার প্রভাব পড়বে চীনের ওপর। বেল্ট অ্যান্ড রোড বা অঞ্চল ও পথ উদ্যোগ প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে। এ ছাড়া সে দেশের ভেতরে গৃহায়ণ খাতে যেভাবে ঋণের ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে বিষয়টি ১৯৯০-এর দশকের জাপানি অর্থনীতির হারিয়ে যাওয়া দশকের সঙ্গে তুলনীয়। খবর ফোর্বসের

স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ করেছে ভারত। আগামী ২৫ বছর হবে ভারতের অমৃতকাল। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধনী ও ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি ২০তম ফোর্বস গ্লোবাল সিইও সম্মেলন-২০২২-এ মূল বক্তা হিসেবে এসব কথা বলেন।
বক্তৃতায় গৌতম আদানি বলেন, ভারতের প্রকৃত প্রবৃদ্ধির কাল কেবল শুরু হচ্ছে। তিনি আগামী ২৫ বছরের ভারতের চিত্র আঁকেন এভাবে: এই সময়ের মধ্য ভারত শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন করবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত হবে। আর ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতের মধ্য বয়েসীদের গড় বয়স হবে ৩৮ বছর। তখন ভারতের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৬০ কোটি। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের বৃহত্তম মধ্যবিত্ত শ্রেণির বসবাস হবে ভারতে। এই বিপুলসংখ্যক মধ্যবিত্ত শ্রেণির চাহিদার কথা বিবেচনা করে বিশ্বের বৃহত্তম প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) গন্তব্য হবে ভারত, যার শেয়ারবাজারের ক্যাপিটালাইজেশন দাঁড়াবে ৪৫ ট্রিলিয়ন বা ৪৫ লাখ কোটি ডলার।
কোভিডের কারণে ২০২০ সালে ভারতীয় অর্থনীতি সংকুচিত হলেও ২০২১ সালে ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। চলতি বছরও ভারতের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে। গৌতম আদানি এ প্রসঙ্গে বলেন, ডিজিটাল বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে ভারতে, তার বদৌলতে সে দেশের প্রবৃদ্ধির পালে আরও হাওয়া লাগবে।

বক্তৃতায় আদানি বলেন, ২০২১ সালে ভারতে প্রতি ৯ দিনে একটি করে ইউনিকর্নের (শত কোটি ডলারের স্টার্টআপ) জন্ম হয়েছে এবং বিশ্বের সর্বাধিক ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন করেছে তারা ৪৮ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৮০০ ডলার। এটা চীনের তিন গুণ এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স ও জার্মানির সম্মিলিত লেনদেনের ছয় গুণ।

গত বছর ভারতে ৮৫ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে উল্লেখ করে আদানি বলেন, চলতি বছর এই ধারা ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। তাঁর মতে, ভারতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের যে আগ্রহ বাড়ছে, এটা তারই লক্ষণ। এই প্রবাহ আগামী ১৫ বছরে বার্ষিক ৫০০ বিলিয়ন বা ৫০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে তাঁর প্রত্যাশা।
তবে গত ৩৬ মাসে পৃথিবী অনেকটাই বদলে গেছে বলে মনে করেন গৌতম আদানি। অভূতপূর্ব জটিলতার কারণে চাহিদাও একইভাবে বেড়েছে। ফলে ৪০ বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যেভাবে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আদানি। তিনি বলেন, এতে মন্দা হতে পারে।