চীনের ই-কমার্স সাইট আলিবাবার চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে নতুন মুখ এসেছে। এত দিন আলিবাবার চেয়ারম্যান ও সিইও ছিলেন একই ব্যক্তি—ড্যানিয়েল ঝ্যাং। তবে গতকাল মঙ্গলবার নতুন ঘোষণায় চেয়ারম্যান ও সিইও পদে আলাদা দুজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, বিশাল এই চীনা কোম্পানির ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের ঘটনা।
আলিবাবার সহপ্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান জোসেফ সাই হবেন প্রতিষ্ঠানের নতুন চেয়ারম্যান। আর আলিবাবার আরেক ই-কমার্স ইউনিট তাওবাও ও তিমাল গ্রুপের চেয়ারম্যান এডি উ আলিবাবার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ড্যানিয়েল ঝ্যাংর স্থলাভিষিক্ত হবেন।
আলিবাবা জানিয়েছে, উভয় নিয়োগই আগামী সেপ্টেম্বরে কার্যকর হবে। বর্তমান চেয়ারম্যান ও সিইও ঝ্যাং আলিবাবার ক্লাউড ইউনিটের চেয়ারম্যান ও সিইও হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবেন।
২০১৯ সালে আলিবাবার সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে সরে যান। সে সময় (২০১৫ সাল থেকে) আলিবাবার সিইও ছিলেন ড্যানিয়েল ঝ্যাং। এর পর থেকে ঝ্যাং চেয়ারম্যান ও সিইও উভয় দায়িত্ব সামলে আসছিলেন। প্রায় চার বছরের মাথায় আলিবাবার শীর্ষ পদে আবার পরিবর্তন হতে চলেছে।
সম্প্রতি এক ঘোষণায় আলিবাবা জানিয়েছিল, তারা ২৪ বছরের মধ্যে কোম্পানির সবচেয়ে বড় পুনর্গঠন করতে যাচ্ছে। এই ঘোষণার কয়েক মাসের মধ্যেই শীর্ষ পদে পরিবর্তনের ঘোষণা এল।
গত মার্চে আলিবাবা বলেছিল, তাদের মূল কোম্পানিটি ক্লাউড, ই-কমার্স, লজিস্টিকস বা সরবরাহ, মিডিয়া, বিনোদনসহ ছয়টি পৃথক ইউনিটে বিভক্ত হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিট নিজস্ব সিইও ও বোর্ড পরিচালকদের দ্বারা তত্ত্বাবধান করা হবে। তাদের অধিকাংশই পৃথকভাবে শেয়ারবাজারে যুক্ত হওয়া বা তহবিল সংগ্রহ করতে পারে।
আলিবাবার নতুন সিইও হতে চলা এডি উ প্রতিষ্ঠানের একজন সহপ্রতিষ্ঠাতাও। ১৯৯৯ সালে কোম্পানির সূচনাকালে প্রযুক্তি পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। নতুন দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমান রূপান্তর কোম্পানির মধ্যে একটি নতুন করপোরেট কাঠামো ও সুশাসন নিয়ে আসবে। তবে আলিবাবার মূল লক্ষ্য অপরিবর্তিত রয়েছে।
আলিবাবা হলো চীনের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স কোম্পানি। বছরে এটির তাওবাও ও তিমাল প্ল্যাটফর্মে ৯০ কোটির বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছেন। পাশাপাশি এটি চীনের বৃহত্তম ক্লাউড কম্পিউটিং ও ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মও পরিচালনা করে থাকে।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীন সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক চাপের মধ্যে রয়েছে আলিবাবা ও এর সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। ২০২০ সালের শেষের দিকে জ্যাক মা এক বক্তৃতায় চীনের আর্থিক নিয়ন্ত্রকদের সমালোচনা করেন। এরপর দেশটির সরকার আলিবাবার মালিকানাধীন অ্যান্ট গ্রুপের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও বাতিল করে দেয়, পাশাপাশি বড় ধরনের জরিমানাও করে।
তার পর থেকে জ্যাক মা জনসাধারণের দৃষ্টি থেকে এক রকমের অদৃশ্য হয়ে যান। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায়ও তিনি পিছিয়ে ছিলেন। গুঞ্জন রয়েছে, তখন তিনি তাঁর বন্ধুমহল ও আলিবাবার বিনিয়োগকারীসহ বেশির ভাগ সময় বিদেশে কাটিয়েছেন। গত মার্চে হঠাৎ জনসমক্ষে তাঁর উপস্থিতি দেখা যায়। এর পরপরই আলিবাবা তার পুনর্গঠন পরিকল্পনা ঘোষণা করে। জ্যাক মা বর্তমানে গবেষণা ও শিক্ষকতায় বেশি সময় দিচ্ছেন।