তাইওয়ানের নির্বাচনের পর দেশটির সঙ্গে চীনের সম্পর্কের বিষয় নিয়ে বৈশ্বিক উদ্বেগ কিছুটা প্রশমিত হতে পারে। তবে নির্বাচনের যে ফলাফল, তাতে করে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের চিন্তা দূর হচ্ছে না। নির্বাচনের পর দেশটির অর্থনৈতিক নীতির ধারাবাহিকতা নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হওয়ায় দেশটির শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের অনেকে শেয়ার বিক্রি করেছেন।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট লাই চিং–তে গত শনিবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। এ নিয়ে টানা তিনবার নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি)। কিন্তু নির্বাচনে জিতলেও দলটি সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে লাইয়ের ব্যয় পরিকল্পনা ও চীনের বিষয়ে আগ্রাসী অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি জটিল হয়ে পড়েছে।
চীন সব সময়ই দাবি করে, তাইওয়ান তাদের ভূখণ্ডের অংশ। লাই চিং–তেকে বেইজিং বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যা দেয়। তবে নির্বাচনের পর চীনের সুরও খানিকটা নরম হয়েছে। লাইয়ের নাম উল্লেখ না করে তারা বলেছে যে ফলাফল দেখে বোঝা যায়, ডিপিপি তাইওয়ানের মানুষের মূলধারার জনমতের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না।
বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, নীতিগত বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সমস্যা হবে, এমন আশঙ্কার কারণে তাইওয়ানের শেয়ারবাজার এ সপ্তাহে ধাক্কা খেতে পারে। গত এক বছরে এই শেয়ারবাজারে ২৫ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
তা সত্ত্বেও নির্বাচনের এই ফলাফল বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছুটা স্বস্তির কারণ হয়েছে। কারণ, তাঁদের ভয় ছিল, যুদ্ধংদেহী মনোভাবের লাই চিং–তে তাইওয়ানকে স্বাধীনতার পথে নিয়ে যাবেন। তবে লাই বিষয়টি স্বীকার করেন না। বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করেছিলেন, চীনের পক্ষ থেকে বৈরী প্রতিক্রিয়া আসবে। শুধু তা–ই নয়, চীন তাইওয়ানের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে এবং পরিণামে বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর শিল্প খোঁড়া হয়ে যাবে।
ফ্রান্সের বিনিয়োগ ব্যাংক নেটিক্সিসের হংকং কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ গার্সিয়া হেরেরো বলেছেন, ‘আমি কল্পনা করেছিলাম যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে। বাজার যদি মনে করত যে দুর্বল সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, তাহলে তাইওয়ান অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ ঝুঁকির মুখে পড়ত। কারণ, সেই পরিস্থিতিতে আইন প্রণয়নের ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ থাকে না।’
হেরেরো আরও বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর লাইয়ের ভারসাম্যপূর্ণ বক্তৃতা ও ঝুলন্ত সংসদের কারণে চীন শেষ পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া না–ও জানাতে পারে। চীন যদি কিছু না করে, তাহলে বাজার ধরে নেবে যে এটা কোনো বড় বিষয় নয়, ফলে বাজারের আচরণ ইতিবাচক হতে পারে।
বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, চলতি সপ্তাহে তাইওয়ানের শেয়ারবাজারে বেচাকেনা বেশ খানিকটা বাড়বে, সেই সঙ্গে দেশটির মুদ্রার দরপতন হতে পারে। কিন্তু নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগপর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা শক্ত হাতেই সব মোকাবিলা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি তাইওয়ানের সংসদ অধিবেশন শুরু হবে এবং লাইয়ের মন্ত্রিসভা আগামী ২০ মে দায়িত্ব নেবে।