পৃথিবীর শীর্ষ ১০ ধনী কারা, কীভাবে তাঁরা শতকোটিপতি হলেন?

বিলিওনিয়ার বা শতকোটিপতিরা খুবই ক্ষমতাবান মানুষ। পৃথিবীজুড়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর তাঁদের যে শুধু বিপুল প্রভাব থাকে, তা-ই নয়, তাঁদের বড় ভূমিকা রাখেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি থেকে শুরু করে, গণমাধ্যম, পরোপকার এবং এমনকি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও।

তাঁরা এমন সব কোম্পানি গড়ে তোলেন, যাতে দুনিয়াজুড়ে কাজ করেন লাখ লাখ মানুষ। এসব কোম্পানি প্রায় সবাই চেনে মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, টেসলা, গুগল ও নাইকি।

ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ধনীদের প্রায় সবাই সেলফ-মেইড। অর্থাৎ নিজের চেষ্টায় এঁরা বিপুল অর্থ সম্পদ গড়ে তুলেছেন। কেউ কেউ উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ পেলেও তা বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছেন এবং নিজের নিজের ক্ষেত্রে সাম্রাজ্য গড়েছেন।

অনেক শতকোটিপতি তাঁদের কোম্পানি শেয়ার ধরে রাখার মাধ্যমে ধনী হয়েছেন। শেয়ারের দাম যত বেড়েছে, তাঁরা ততই ধনী হয়েছেন।

ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ ফেব্রুয়ারি গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন ধনীদের তালিকায় যথাক্রমে ৮ম এবং ১০ম ছিলেন। কিন্তু গুগলের মূল কোম্পানি আলফাবেটের শেয়ারের দাম গত এক মাসে ৯ শতাংশ পড়ে গেলে তাঁরাও শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকার বাইরে চলে যান।

তেমনভাবেই ২০২১ সালের মার্চে বিশ্বের শীর্ষ ৫ম ধনী মার্ক জাকারবার্গ দশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যান তাঁর কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে যাওয়ার কারণে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুকেশ আমবানিকে হটিয়ে এশিয়ার শীর্ষ ধনী হয়েছিলেন ভারতের গৌতম আদানি। শুধু গত বছরেই তাঁর সম্পদ সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি ডলার বাড়ে, ফলে জানুয়ারি মাসে তিনি হন পৃথিবীর শীর্ষ তৃতীয় ধনী। তখন তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।

কিন্তু জানুয়ারির ২৪ তারিখে হিনডেনবার্গ রিসার্চের এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাঁর সম্পদ কমতে শুরু করে। ১ ফেব্রুয়ারি তিনি শীর্ষ ১০ থেকে বেরিয়ে যান। আর ১ মার্চ তিনি ছিলেন ৩২তম ধনী, সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।

দেখা যাক ওই দিন, অর্থাৎ ১ মার্চ ফোর্বসের তালিকায় শীর্ষ ১০ ধনী কে ছিলেন। তবে মনে রাখতে হবে শেয়ারের দাম প্রতিদিনই ওঠানামা করে, ফলে তালিকায় প্রায় প্রতিদিনই পরিবর্তন হতে পারে। তবে ফোর্বসের শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকায় ১ মার্চের পর আর কোনো পরিবর্তন হয়নি।

বার্নার্ড আরনল্ট

১) বার্নার্ড আরনল্ট
সম্পদের পরিমাণ: ২১ হাজার কোটি ডলার
উৎস: এলভিএমএইচ/লাক্সারি পণ্য
বয়স: ৭৩
বসবাস: প্যারিস
নাগরিক: ফ্রান্স
বার্নার্ড আরনল্ট হলেন এলভিএমএইচ নামের একটি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং চেয়ারম্যান। এই কোম্পানি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিলাস পণ্য উৎপাদনকারী। তাদের ৭০টি ফ্যাশন প্রসাধন ব্র্যান্ড রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে লুই ভুইটন, ক্রিস্টিয়ান ডিওর, মোয়ে অ্যান্ড চ্যান্ডন ও সেফোরা।
২০২১ সালে এই কোম্পানি ১ হাজার ৫৮০ কোটি ডলার দামে গয়না বানানোর কোম্পানি টিফানি অ্যান্ড কোম্পানিকে কিনে নেয়।
আরনল্টের বাবা নির্মাণশিল্পে টাকা বানিয়েছিলেন। পরে আরনল্ট তাঁর কাছ থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার নিয়ে ক্রিস্টিয়ান ডিওর কিনেছিলেন।

ইলন মাস্ক

২) ইলন মাস্ক
সম্পদ: ১৯ হাজার ৬৫০ কোটি ডলার
উৎস: টেসলা, স্পেসএক্স, টুইটার
বসবাস: অস্টিন, টেক্সাস
নাগরিক: ইউএস
বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি টেসলা, রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স এবং সামাজিক মাধ্যম কোম্পানি টুইটারের প্রধান নির্বাহী মাস্ক। তাঁর সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ এসেছে টেসলা থেকে। গত বছরের অক্টোবরে তিনি ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে টুইটার কেনেন এবং কোম্পানির ৭৪ শতাংশের শেয়ারের মালিক তিনি।
মাস্ক এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। তাঁর বয়স ১৮ হওয়ার আগেই তিনি কানাডায় পাড়ি জমান। অনেক রকম কাজ করে তিনি প্রথমে পড়েন অন্টারিওর কুইনস ইউনিভার্সিটিতে। এরপর তিনি যান ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়াতে। সেখানে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০০০ সালে তিনি তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠা করা অনলাইন ব্যাংক এক্সডটকম-এর সাথে একই রকম আরেকটি প্রতিষ্ঠান একত্রকরণ করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন পেপাল। ২০০২ সালে ইবে এটি ১৪০ কোটি ডোরে কিনে নেয়। ওই বছরেই তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে এল সেগান্ডোতে প্রতিষ্ঠা করেন স্পেসএক্স।
২০০৪ সালে তিনি টেসলায় একজন বিনিয়োগকারী এবং চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। পরে তাঁকে সহপ্রতিষ্ঠা পরিচয় দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
মাস্ক ২০০৮ সালে টেসলার প্রধান নির্বাহী হন। দুই বছর পরে তিনি বাজারে কোম্পানির শেয়ার ছাড়েন। ২০২০-২১ সালে কোম্পানির শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়ে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে মাস্ক পৃথিবীর শীর্ষ ধনীতে পরিণত হন। ওই বছরের নভেম্বরে তাঁর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৩২ হাজার কোটি ডলারে।
ডিসেম্বর ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি শীর্ষ ধনী ছিলেন। তবে টেসলার শেয়ারের দাম কমে যাওয়ার কারণে তাঁর সম্পদের পরিমাণ কমে যায়।

জেফ বেজোস

৩) জেফ বেজোস
সম্পদের পরিমাণ: ১১ হাজার ৭৪০ কোটি ডলার
উৎস: অ্যামাজন
বয়স: ৫৯
বসবাস: মেডিনা, ওয়াশিংটন
নাগরিক: ইউএস
জেফ বেজোস ২০২১ সালের জুলাইয়ে ই-কমার্স কোম্পানি অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী হিসাবে সরে দাঁড়ান। তবে তিনি এখনো কোম্পানির চেয়ারম্যান। ২০২১ সালের জুলাই মাসেই তিনি ব্লু অরিজিন কোম্পানির বানানো রকেটে করে মহাশূন্যে গিয়েছিলেন। কোম্পানিটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন শত শত কোটি ডলার ব্যয়ে।
১৯৯৪ সালে বাড়ির গ্যারেজে তিনি অ্যামাজনডটকম প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে তিনি নিউইয়র্কে হেজফান্ড কোম্পানি ডি. ই. শ-তে কাজ করতেন।
অ্যামাজনের শুরু অনলাইনে বই বেচার মাধ্যমে। তখন খুব কম মানুষই অনলাইনে পণ্য কিনতেন। এরপর অ্যামাজন ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবসায় ঢোকে। পরে আসে সিনেমা এবং বিভিন্ন সিরিয়াল তৈরির ব্যবসা, যা দেখানো হয় অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও-তে।
বেজোস ২০১৭ সালের জুলাইয়ে বিল গেটসকে সরিয়ে পৃথিবীর শীর্ষ ধনী হন। দুইয়ে নেমে আসেন গেটস। ফোর্বসের শীর্ষ ধনীর তালিকায় ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১ নম্বর অবস্থান ধরে রেখেছিলেন বেজোস। তবে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে তিনি নেমে যান ২০২২ সালে। তিনি চতুর্থ অবস্থানে নেমে গিয়েছিলেন, ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি আবার তৃতীয় স্থানে উঠে আসেন যখন ভারতের গৌতম আদানির সম্পদ কমে যায়।
বেজোসের সঙ্গে স্ত্রী ম্যাককেনজির বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে ২০১৯ সালে। বিচ্ছেদের পর তাঁদের সম্পদ ভাগাভাগি হয়। তাঁদের হাতে থাকা অ্যামাজনের শেয়ারের ৪ শতাংশ পান ম্যাককেনজি এবং বেজোস পান ১২ শতাংশ। এরপর বেজোস বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করেন এবং বর্তমানে কোম্পানির ১০ শতাংশের মতো শেয়ারের মালিক তিনি।
১৯৯৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর বেজোস ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যমানের শেয়ার বিক্রি করেছেন বলে ফোর্বসের হিসাব বলছে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

ল্যারি এলিসন

৪) ল্যারি এলিসন
সম্পদের পরিমাণ: ১১ হাজার ২৩০ কোটি ডলার
উৎস: ওরাকল
বয়স: ৭৮ বছর
বসবাস: লানাই, হাওয়াই
নাগরিক: ইউএস
সফটওয়্যার কোম্পানি ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠা ল্যারি এলিসন। ১৯৭৭ সালে এটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি এটি পরিচালনা করেন। বর্তমানে তিনি এটির চেয়ারম্যান এবং প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওরাকল বিশ কিছু বড় কোম্পানি কিনে নেয়। এদের একটি ছিল সান মাইক্রোসিস্টেম। এটি তারা কেনে ২০১০ সালে।
২০১২ সালে এলিসন হাওয়াইয়ের দ্বীপ লানাই কিনে নেন ৩০ কোটি ডলারের বিনিময়ে। ২০২০ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ওই দ্বীপে চলে যান।
এলিসন টেসলাতেও বিনিয়োগ করেন। ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত তিনি এই গাড়ি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ওয়ারেন বাফেট

৫) ওয়ারেন বাফেট
সম্পদের পরিমাণ: ১০ হাজার ৬৪০ কোটি ডলার
উৎস: বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে
বয়স: ৯২ বছর
বসবাস: ওমাহা, নেব্রাস্কা
নাগরিক: ইউএস
তিনি পরিচিত ‘ওরাকল অব ওমাহা’ বা ওমাহার দৈববক্তা হিসেবে। ওয়ারেন বাফেট ইতিহাসের অন্যতম সফল একজন বিনিয়োগকারী। তিনি বিনিয়োগ কোম্পানি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে। আর তাদের মালিকানায় আছে বেশ অনেকগুলো কোম্পানি। এর মধ্যে রয়েছে ইনস্যুরেন্স কোম্পানি গেইকো, ব্যাটারি প্রস্তুতকারক ডিউরাসেল এবং রেস্তোরাঁ চেইন ডেইরি কুইন।
মার্কিন একজন কংগ্রেস সদস্যের পুত্র ছিলেন তিনি। বাফেট জীবনের প্রথম শেয়ারটি কেনেন ১১ বছর বয়সে, আর প্রথমবারের মতো কর দেন ১৩ বছর বয়সে।
বিল গেটস এবং মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের সঙ্গে মিলে তিনি ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘গিভিং প্লেজ’। তাঁরা কোটিপতিদের কাছে আহবান জানান, তাঁরা যেন অন্ততপক্ষে তাঁদের সম্পদের অর্ধেক দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করেন। বাফেট জানান, তিনি তাঁর সম্পদের ৯৯ শতাংশ দান করবেন।
তিনি এখন পর্যন্ত গেটস ফাউন্ডেশন এবং তার নিজের সন্তানদের দাতব্যে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের ৫ হাজার ১৫০ কোটি ডলার দামের শেয়ার দান করেছেন। আর এই দান তাঁকে এই পৃথিবীর সবচেয়ে উদার শতকোটিপতির মর্যাদা দিয়েছে।

বিল গেটস

৬) বিল গেটস
সম্পদের পরিমাণ: ১০ হাজার ৪৯০ কোটি ডলার
উৎস: মাইক্রোসফট, বিনিয়োগ
বয়স: ৬৭ বছর
বসবাস: মেডিনা, ওয়াশিংটন
নাগরিক: ইউএস
সেই কিশোর বয়স থেকেই গেটস কম্পিউটার প্রোগাম নিয়ে মেতে উঠেছিলেন। ১৯৭৫ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা বাদ দিয়ে তিনি স্কুলের বন্ধু পল অ্যালেনের সঙ্গে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময়ে ব্যক্তিগত কম্পিউটার শিল্প মাত্র গড়ে উঠছিল এবং সেই শিল্পের জন্য মাইক্রোসফট প্রথম দিককার একটি সফটওয়ার প্রোগ্রাম তৈরি করে।
গেটস দীর্ঘ ২৫ বছর মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। এরপর ২০১৪ সাল পর্যন্ত পালন করেন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব। কোম্পানির পরিচালনা পর্যদ থেকে তিনি সরে দাঁড়ান ২০২০ সালে। বর্তমানে তাঁর অনেক কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে, যার একটি রিপাবলিক সার্ভিসেস।
এ ছাড়া আমেরিকায় যাঁদের হাতে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি রয়েছে, তিনি তাঁদের একজন।
ফোর্বস গেটসকে একজন বিলিওনিয়ার হিসেবে প্রথম তালিকাভুক্ত করে ১৯৮৭ সালে। ২০০৮ এবং ২০১০-২০১৩ সময়কাল বাদ দিয়ে ১৯৯৫ সাল থেকে শুরু করে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন পৃথিবীর শীর্ষ ধনী। তিনি ৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলার গেটস ফাউন্ডেশনে দান করেছেন, যার মধ্যে ২০২২ সালের জুলাইয়ে উপহার দিয়েছেন ২ হাজার কোটি ডলার। ফলে ২০১৮ সালে তিনি জেফ বেজোসের কাছে শীর্ষ ধনীর মুকুট হারান।
মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের সাথে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে ২০২১ সালে। বিচ্ছেদের ফলে মেলিন্ডা ৬০০ কোটি ডলারের শেয়ার পান।

কার্লোস স্লিম হেলু

৭) কার্লোস স্লিম হেলু
সম্পদের পরিমাণ: ৮ হাজার ৯৯০ কোটি ডলার
উৎস: টেলিকম, বিনিয়োগ
বয়স: ৮৩ বছর
বসবাস: মেক্সিকো সিটি
নাগরিক: মেক্সিকো
কার্লোস স্লিম হেলু এবং তাঁর পরিবার লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় মোবাইল টেলিফোন কোম্পানি ‘আমেরিকা মোভিল‘ নিয়ন্ত্রণ করে। কমপক্ষে ১৫টি দেশে এই কোম্পানির কার্যক্রম আছে। স্লিম এবং আরও কয়েকজন বিদেশি টেলিকম অংশীদার ১৯৯০ সালে সরকারি মালিকানাধীন টেলমেক্স অধিগ্রহণ করেছিলেন। এরপর টেলমেক্স আমেরিকা মোভিল-এর অংশ হয়।
এর বাইরে তাঁর নির্মাণ, ভোগ্যপণ্য, খনিজ উত্তোলন এবং রিয়েল এস্টেট ব্যবসার বিভিন্ন কোম্পানিতে মালিকানা রয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের ১৭ শতাংশের মালিকানা তাঁর ছিল। তবে তিনি ২০২১ সালে এই শেয়ার বিক্রি করে দেন।
স্লিম ২০১০-২০১৩ সময়ে বিল গেটস এবং ওয়ারেন বাফেটকে টপকে স্লিম পৃথিবীর শীর্ষ ধনী হয়েছিলেন। ব্যবসা শুরু করার আগে তিনি ছাত্রদের অ্যালজেবরা শেখাতেন। তাঁর কাজের জায়গা ছিল মেক্সিকো সিটির একটি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউএনএএম।

মুকেশ আমবানি

৮) মুকেশ আমবানি
সম্পদের পরিমাণ: ৮ হাজার ৩৩০ কোটি ডলার
উৎস: পেট্রোকেমিক্যাল, টেলিযোগাযোগ
বয়স: ৬৫
বসবাস: মুম্বাই, ভারত
নাগরিক: ভারত
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আমবানি। ১০ হাজার ৪০ কোটি ডলারের ব্যবসা করা এই কোম্পানি তিনিই চালান। তাঁর ব্যবসা রয়েছে পেট্রোকেমিক্যাল, তেল ও গ্যাস, টেলিকম ও খুচরা পণ্য বিক্রয় খাতে। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকানায় রয়েছে নেটওয়ার্ক ১৮, ফোর্বস মিডিয়ার লাইসেন্স এবং নিউইয়র্কের ম্যান্ডারিন অরিয়েন্টাল হোটেল।
রিলায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা তাঁর পিতা ধীরুভাই আমবানি। ১৯৬৬ সালে একজন ক্ষুদ্র বস্ত্রকলের মালিক হিসেবে তিনি সুতার ব্যবসা শুরু করেন। ২০০২ সালে পিতার মৃত্যুর পর আমবানি এবং তাঁর ছোট ভাই অনিল পারিবারিক ব্যবসা ভাগ করে নেন।
প্রায় ১৪ বছর ধরে আমবানি ভারতের শীর্ষ ধনী ছিলেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে গৌতম আদানি তাঁকে টপকে ভারতের শীর্ষ ধনী হন। তবে ঠিক এক বছর পরে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আবার ভারতের শীর্ষ ধনীর মুকুট ফেরত পান। কারণ এই সময়ে ব্যাপকভাবে সম্পদ হারান গৌতম আদানি।
আমবানি ফোর্বসের তৈরি পৃথিবীর সেরা ১০ ধনীর তালিকায় ছিলেন ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত। এরপর তিনি আবার এই তালিকায় ঢোকেন ২০২১ সালে।

স্টিভ বালমার

৯) স্টিভ বালমার
সম্পদের পরিমাণ: ৮ হাজার ৯০ কোটি ডলার
উৎস: মাইক্রোসফট, বিনিয়োগ
বয়স: ৬৬ বছর
বসবাস: হান্টস পয়েন্ট, ওয়াশিংটন
নাগরিক: ইউএস
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে বিল গেটসের সঙ্গে একই ক্লাসে পড়তেন বালমার। তিনি মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। এমবিএ কোর্স থেকে ঝরে পড়ার পর তিনি ১৯৮০ সালে মাইক্রোসফটের ৩০ নম্বর কর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।
মাইক্রোসফট থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি ২০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে লস অ্যাঞ্জেলেস টিম কিনে নিয়েছিলেন। যেকোনো এনবিএ টিমের জন্য ওই দাম ছিল সেই সময়ের একটি রেকর্ড।

ফ্রঁসোয়াজ বেটেনকোর্ট মায়ার্স

১০) ফ্রঁসোয়াজ বেটেনকোর্ট মায়ার্স
সম্পদের পরিমাণ: ৮ হাজার ৭০ কোটি ডলার
উৎস: লরিয়াল
বয়স: ৬৯ বছর
বসবাস: প্যারিস, ফ্রান্স
নাগরিক: ফ্রান্স
ফ্রঁসোয়াজ বেটেনকোর্ট মায়ার্স পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী নারী। তাঁর পিতামহ বিখ্যাত প্রসাধন সামগ্রী প্রস্ততকারক কোম্পানি লরিয়াল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফ্রঁসোয়াজ বেটেনকোর্ট মায়ার্স এবং তাঁর পরিবার লরিয়ালের মোট শেয়ারের ৩৩ শতাংশের মালিক।
তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে লরিয়ালের একজন পর্ষদ সদস্য এবং এই পারিবারিক মালিকানার কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন।
ফ্রঁসোয়াজ বেটেনকোর্ট মায়ার্স তাঁর সম্পদ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন ২০১৭ সালে, তাঁর মা লিলিয়ান বেটেনকোর্টের মৃত্যুর পর। তাঁদের যে পারিবারিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তিনি তারও প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞান ও শিল্পের অগ্রগতিকে উৎসাহ দেয়।