প্রতীকী ছবি
প্রতীকী  ছবি

বিলাসপণ্যের বিক্রি কমেছে বিশ্ববাজারে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাব

চলতি বছর ব্যক্তিগত বিলাসপণ্য বিক্রি কমে গেছে। গত বছরের তুলনায় বিক্রি কমতে পারে ২ শতাংশ। এই পূর্বাভাস দিয়েছে ম্যানেজমেন্ট কনসালটিং প্রতিষ্ঠান বেইন অ্যান্ড কোম্পানি।

সংস্থাটির মতে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়েছে শৌখিন পণ্যের বাজারে; এই পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ কেনাকাটায় হিসেবি হয়েছে। খবর রয়টার্স

পূর্বাভাসে বেইন অ্যান্ড কোম্পানি জানায়, চলতি বছরে চীনে ব্যক্তিগত বিলাসপণ্যের বিক্রি কমতে পারে ২০-২২ শতাংশ। এ সময় সামগ্রিকভাবে মোট বেচাকেনার পরিমাণ হতে পারে ৩৬ হাজার ৩০০ কোটি ইউরো বা ৩৮ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।

বেইন অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার ফেডেরিকা লেভাটো বলেন, ‘২০০৮-০৯ সালের বৈশ্বিক সংকটের পর এই প্রথম মহামারির বছর বাদে ব্যক্তিগত বিলাসবহুল পণ্য কেনাকাটা কমতে যাচ্ছে।’

কোভিড-১৯ মহামারির আগে বিলাসদ্রব্যের কেনাবেচায় ভালো গতি ছিল। বিশেষ করে ধনী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে যাঁদের আয় বেড়েছে, তাঁরা বিলাসবহুল পণ্যের প্রতি বেশি ঝুঁকেছেন। কিন্তু মহামারির পর এই প্রবণতায় ছেদ পড়ে, যার জের এখনো চলছে।

প্রতিবেদনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বিলাসবহুল পণ্য খাতে মন্দাভাবের প্রভাব এরই মধ্যে এলভিএমএইচ ও কেরিংয়ের মতো বড় কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামে পড়েছে। শুধু তা–ই নয়, এই প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং এমনকি মানুষের আশঙ্কার চেয়ে তা অধিকতর গুরুতর হতে পারে।

লেভাটো বলেন, মুদ্রার বিনিময়হার সমন্বয়ের পর ছুটির মৌসুমে পোশাক, আনুষঙ্গিক ও সৌন্দর্য–পণ্যসহ ব্যক্তিগত বিলাসপণ্যের বৈশ্বিক বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি দেখা নাও হতে পারে। কারণ আর কিছু নয়, চীনের অর্থনীতির ধীরগতি।

ব্র্যান্ডগুলোর দাম বাড়ানো, বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, নির্বাচন ও চীনের অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণে ভোক্তাদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এ কারণে অনেক গ্রাহক, বিশেষ করে কম বয়সীরা বিলাসপণ্য কিনতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন।

লেভাটো আরও বলেন, গত দুই বছরে বিলাসপণ্যের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৪০ কোটি থেকে কমে ৩৫ কোটিতে নেমেছে, অর্থাৎ গ্রাহকসংখ্যা কমেছে ৫ কোটি। এখন ব্র্যান্ডগুলো বেচাকেনা বাড়াতে কী কৌশল নেয়, শৌখিন পণ্যের বাজারের প্রবৃদ্ধি অনেকটা তার ওপর নির্ভর করছে। মূলত দামে কতটা ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তার ওপরই বেচাকেনা নির্ভর করবে। উচ্চমূল্যের কারণে ভোক্তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন বলে বেইনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বেইন আরও জানিয়েছে, ২০২৫ সালে ব্যক্তিগত বিলাসবহুল পণ্যের বাজারের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ শতাংশ, মুদ্রার সম্ভাব্য বিনিময়হারের সঙ্গে সমন্বয়ের পর এই পরিমাণ প্রবৃদ্ধির হিসাব করা হয়েছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর ভর করে এই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। অন্যদিকে, ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে চীনের বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ফেডেরিকা লেভাটো বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা কমেছে। সেই সঙ্গে সুদহার ও কর হ্রাসের কারণে আমেরিকানরা আরও বেশি ব্যয় করতে উৎসাহী হবে বলে বাজার–সংশ্লিষ্ট মানুষেরা আশা করছেন।

ব্যক্তিগত বিলাসপণ্যের বিপরীতে আতিথেয়তা ও খাবারের মতো খাতে চলতি বছর বিলাসী ব্যয় বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বেইন অ্যান্ড কোম্পানি।