অর্থনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে চীন। চীনের রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব উৎপাদন খাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে উচ্চপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে। এসব খাতের মধ্যে রয়েছে সেমিকন্ডাক্টর থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ি।
তবে উচ্চপ্রযুক্তি খাতে চীনের আবারও অতি সক্ষমতাও তৈরি হবে। ফলে তারা আবারও সস্তা পণ্য দিয়ে বাজার সয়লাব করে ফেলবে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক সংবাদে বলা হয়েছে।
চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণের যে তথ্য রয়টার্স পেয়েছে, তাতে সরকারের অগ্রাধিকার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। এতে দেখা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চীনের দুর্দশাগ্রস্ত আবাসন খাতে বকেয়ার পরিমাণ শূন্য দশমিক ২ শতাংশ কমেছে, যদিও উৎপাদন খাতে ঋণ ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে।
এর আগেও দেখা গেছে, চীনের বিভিন্ন খাতে এভাবে বিনিয়োগ বেড়েছে; যেমন একসময় চীনের সোলার প্যানেল-শিল্প ফুলেফেঁপে উঠেছিল। কিন্তু পরিণতিতে একধরনের বাণিজ্যিক সংঘাত তৈরি হয় এবং অনেক কোম্পানি ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।
চীনের এই বিনিয়োগপ্রবণতা নিয়ে বাণিজ্য অংশীদারেরা সতর্ক হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ইউরোপে এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে, অর্থাৎ চীন বৈদ্যুতিক গাড়ি খাতে কত ভর্তুকি দিচ্ছে।
বেইজিংয়ে ইউরোপিয়ান চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট জেনস এসকেলানদ বলেছেন, চীনে বৈদ্যুতিক গাড়ির অতটা ব্যবহার নেই, কিন্তু সেখানে বৈদ্যুতিক গাড়ির তৈরির অতি সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। সে জন্য এসব গাড়ি সারা বিশ্বে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁর মতে, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইউরোপ ও চীন দুই বিপরীতমুখী ট্রেনের মতো, যাদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হতে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে এ সপ্তাহে এশিয়া প্যাসিফিক কো-অপারেশন ফোরামের বৈঠক হতে যাচ্ছে, সেখানে চীনের শিল্পনীতি নিয়ে আলোচনা হবে। ফোরামে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাক্ষাৎ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে চীনের উৎপাদন খাত বদলে যাচ্ছে, দেশটি এখন উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন পণ্য নির্মাণের কেন্দ্র হয়ে উঠতে চাচ্ছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক গাড়ি, বায়ুবিদ্যুতের টারবাইন, মহাকাশ গবেষণার উপকরণ ও উন্নত সেমিকন্ডাক্টর। তবে চীনের অর্থনীতিতে যে কাঠামোগত পরিবর্তন আসা দরকার ছিল, তা আসছে না। অর্থাৎ রপ্তানি হ্রাস করে নিজেদের অভ্যন্তরীণ ভোগ বাড়ানোর যে কাঠামোগত পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা চীন হাতে নিয়েছিল, তা সেভাবে কাজে আসছে না। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, উচ্চ হারের প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে হলে এই কাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি।
কিন্তু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ায় চীনের অভ্যন্তরীণ ভোগ অতটা বাড়ছে না। বিশ্বব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালে চীনের জিডিপিতে অভ্যন্তরীণ ভোগের ভূমিকা ছিল মাত্র ৩৮ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের যা ৬৮ শতাংশ এবং বৈশ্বিক পরিসরে যা গড়ে ৫৫ শতাংশ।
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীন যেভাবে উন্নত প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা শুরু করেছে, তা দেশটির জন্য ভালোই হবে। সাধারণভাবে বললে, নতুন খাতে বিনিয়োগ করা অর্থনীতির জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পদক্ষেপ এবং শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য ভালো।
চীনের উৎপাদন বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরতে পারে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। তাঁদের মতে, এই প্রক্রিয়ায় চীন বিশ্ববাজার হারাবে না তো বটেই, বরং তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। পরিণতিতে তা বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।