মার্কিন নারীদের কর্মসংস্থানের হার এখন সবচেয়ে বেশি

নারীরা যখন সবচেয়ে কর্মক্ষম, সেই বয়সে তাঁদের কাজ করার হার গত জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বকালীন উচ্চতায় পৌঁছেছে। মার্কিন শ্রম পরিসংখ্যান দপ্তর জানিয়েছে, জুন মাসে দেশটির সবচেয়ে কর্মক্ষম নারীদের ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশই কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

জুন মাস নিয়ে টানা ৩ মাস ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী নারীদের কাজ করার হার রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। মহামারির সময় নারীদের কাজ করার হার যেভাবে কমে গিয়েছিল, সেই জায়গা থেকে তাঁরা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এখন তা প্রাক্‌-মহামারি পর্যায়ে ফেরত গেছে। খবর সিএনএনের।

নিয়োগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান জিপ রিক্রুটারের প্রধান অর্থনীতিবিদ জুলিয়া পোলক সিএনএনকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যার অনুপাতে কাজে নিয়োজিত—এমন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা রেকর্ড পর্যায়ে উঠেছে; ২০০১ সালের পর যা ৮০ দশমিক ৯ শতাংশে উঠেছে। নারীদের ক্ষেত্রেও তা রেকর্ড ৭৫ দশমিক ৩ শতাংশে উঠেছে।’

তবে জুলিয়া পোলক মনে করেন, মহামারি না হলে কর্মসংস্থানের হার আরও বেশি হতে পারত। তবে মহামারির কারণে যেসব শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা এখন নতুন করে নিয়োগ দিচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতেও কর্মসংস্থানের সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘কেউ সম্প্রতি রেস্তোরাঁয় বা বিমানবন্দরে গিয়ে থাকলে বুঝবেন, যুক্তরাষ্ট্রের এখনো অনেক কর্ম খালি আছে।’

মহামারির আগের কয়েক বছরে নারীদের শ্রমে যুক্ত হওয়ার হার পুরুষদের তুলনায় বাড়ছিল। নানা কারণেই তা হয়েছে, যেমন স্বাস্থ্যসেবা ও সেবা-শুশ্রূষার জগতে নারীদের প্রাধান্য। শুধু তা–ই নয়, তখন এ খাতই ছিল সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল শিল্পগুলোর একটি।

এ ছাড়া নির্মাণ, কৃষি, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের মতো পুরুষের আধিপত্যমূলক খাতগুলোয় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছিল। সেটাও শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ার অন্যতম কারণ।

দেশটির শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুসারে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ছিল ৭৭ শতাংশ। ডটকম বাবল বা তথ্যপ্রযুক্তির বাড়বাড়ন্তের সময় যে হার ছিল ৭৭ দশমিক ৩।

কিন্তু মহামারির দাপটে যুক্তরাষ্ট্র যখন রীতিমতো কাঁপছে, তখন অর্থাৎ ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসে। তখন দুই কোটির বেশি মানুষ কাজ থেকে ছিটকে পড়েছিলেন।

নারীদের কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা ও আন্দোলনের পরও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে নারীরা এখনো পুরুষের চেয়ে কম আয় করেন। দেখা গেছে, ২০২২ সালে পুরুষেরা যে কাজে জন্য ১ ডলার আয় করেছেন, নারীরা সেখানে আয় করেছেন ৮২ সেন্ট। সিএনএন এই তথ্য পেয়েছে পিউ রিসার্চের এক গবেষণা থেকে।

তবে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্যের মাত্রা অবশ্য আগের তুলনায় কমে এসেছে। ১৯৮২ সালে পুরুষেরা ১ ডলার আয় করলে নারীরা করতেন ৬৫ সেন্ট, সেখান থেকে ২০০২ সালেই তা ৮০ সেন্টে উন্নীত হয়। কিন্তু এখনো তা ৮০ সেন্টের ঘরেই ঘোরাফেরা করছে।

নতুন আরেক গবেষণায় অবশ্য দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষের তুলনায় নারী কর্মীর সংখ্যা কম হলেও কোম্পানিগুলো যেভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করছে, তাতে নারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। কর্মরত নারীদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ এমন কাজে আছেন—যাঁদের কাজ এআই ও অটোমেশনের কারণে হুমকির মুখে পড়তে পারে, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে তা ৫৮ শতাংশ।

ফলে নারীদের কর্মজীবনের অনিশ্চয়তা অনেক বেশি।