গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। নির্বাচনের আগে ভোটারদের মনোভাব ও রাজনৈতিক আলোচনায় এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্কিন শ্রম দপ্তরের তথ্যানুসারে, অক্টোবরে মাত্র ১২ হাজার নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। যেখানে সেপ্টেম্বরে মোট ২ লাখ ২৩ হাজার নতুন কর্মসংস্থান হয়েছিল। অর্থাৎ অক্টোবরে দেশটিতে নতুন কর্মসংস্থানের গতি অনেকটাই কমে গেছে। নিয়োগের গতি কমে যাওয়া সত্ত্বেও বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ১ শতাংশই রয়ে গেছে। খবর বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রে ৫ নভেম্বর নির্বাচন। সেই নির্বাচনের আগে এটাই সর্বশেষ সরকারি পরিসংখ্যান। ফলে এই পরিসংখ্যান থেকে মার্কিন অর্থনীতির শক্তিমত্তা সম্পর্কে হালনাগাদ ধারণা পাওয়া যায়।
ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা অন্যতম বিবেচনা হিসেবে কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক ধর্মঘট ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব অর্থনীতিতে অনুভূত হচ্ছে। সে কারণে কর্মসংস্থানের গতি কমে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দপ্তর জানিয়েছে, গত মাসে স্বাস্থ্যসেবা ও সরকারি খাতে নিয়োগ বেড়েছে, যদিও উৎপাদনশিল্পে নতুন চাকরি ধর্মঘটের কারণে কমে গেছে। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে বোয়িংয়ের প্রায় ৩০ হাজার কর্মী ধর্মঘটে আছেন। এই ধর্মঘটের কারণে বিমানের উৎপাদন কার্যক্রমে বড় ধরনের ধীরগতি দেখা গেছে। বোয়িং ছাড়াও টেক্সট্রন নামে আরেকটি বিমান নির্মাণ কোম্পানির কর্মীরাও মালিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনশিল্পে কর্মসংস্থান ৪৬ হাজার কমে গেছে, যেখানে শ্রম দপ্তর জানিয়েছে, পরিবহন সরঞ্জাম উৎপাদন খাতে ৪৪ হাজার কর্মসংস্থান কমেছে মূলত ধর্মঘটের কারণে। অন্যান্য প্রধান শিল্প খাতে গত মাসে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে খুব কম বা তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।
রয়টার্সের জরিপে অর্থনীতিবিদেরা আশা করেছিলেন, অক্টোবরে কর্মসংস্থান বাড়বে ১ লাখ ১৩ হাজার। তবে যাঁরা কর্মবিরতিতে অংশ নিয়েছেন, তাঁরা গত মাসের কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত হননি; অকৃষি খাতে মোট চাকরির সংখ্যা কম দেখানোর এটি অন্যতম কারণ।
ফিচ রেটিংসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান কোলটন বলেন, নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ১২ হাজার, এই সংখ্যা দুর্বল বলে মনে হতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সেপ্টেম্বরে কর্মসংস্থানে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হওয়ার পর এই অক্টোবরে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে হারিকেন হেলেন আঘাত করে। এর এক সপ্তাহ পর হারিকেন মিলটন আঘাত হানে ফ্লোরিডায়। আবহাওয়ার কারণে ৫ লাখ ১২ হাজার মানুষ কাজে যেতে পারেননি। এমনকি পূর্বাভাসের তুলনায় প্রবৃদ্ধির গতি কম হলেও আশা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ কমাবে।
প্রিন্সিপাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিস্ট সীমা শাহ বলেন, আর্থিক বাজার অক্টোবরে চাকরির প্রতিবেদনের এই পরিসংখ্যানে তেমন গুরুত্ব না–ও দিতে পারে। স্পষ্টতই কর্মসংস্থানে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছে; শ্রমবাজারের চিত্র ঘোলাটে হয়েছে; তাই ফেডের নীতি সুদহার হ্রাসের পথ পরিক্রমায় এর প্রভাব পড়া উচিত নয়।
গোল্ডম্যান স্যাকসের অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের লিন্ডসে রোসনার বিবিসিকে বলেন, কর্মসংস্থানে ঝড়ের প্রভাব পড়েছে; নভেম্বরে আকাশ পরিষ্কার হচ্ছে; নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট হ্রাসের সম্ভাবনা আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দপ্তর জানিয়েছে, প্রত্যাশার চেয়ে কম কর্মসংস্থান হওয়ার পেছনে ঝড়ের প্রভাব থাকতে পারে। জরিপে চরম আবহাওয়ার প্রভাব পরিমাপ করার পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়নি।
সংবাদে বলা হয়েছে, গত এক বছরে চাকরির প্রবৃদ্ধি কমেছে, বেকারত্বের হার সামান্য বাড়ছে, যদিও এখন তা ঐতিহাসিকভাবে কম। গত ১২ মাসে ঘণ্টাপ্রতি গড় বেতন বেড়েছে ৪ শতাংশ।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদ হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট হ্রাস করেছে। বেকারত্বের হার যেন আর না বৃদ্ধি পায়, তা নিশ্চিত করতে ফেড এই সিদ্ধান্ত নেয়।