ইতিহাসের অন্যতম বাজে জাহাজজটের মুখোমুখি হয়েছে পানামা খাল। বর্তমানে বিশ্ববাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ এ জলপথের উভয় পাশে ২০০টির বেশি জাহাজ আটকা পড়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, সাধারণত পানামা খাল দিয়ে একটি জলযান পার হতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে পুরো একটি মহাদেশ ঘুরে যাতায়াত করা লাগে না বিধায় খালটি প্রতিবছর ব্যবসায়ীদের শতকোটি ডলার সাশ্রয় করে। সেই হিসাবে খালের উভয় পাশে দুই শতাধিক জাহাজ আটকে থাকা বেশ বড় ঘটনা।
সর্বশেষ করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে খালটিতে বড় পরিসরে জাহাজজট হয়েছিল।
বেশ কিছু কারণে বড় এ জট তৈরি হয়েছে। পানামায় দীর্ঘ মেয়াদে খরার কারণে পানামা খালের পানির স্তর নেমে গিয়েছে। সেই সঙ্গে পানি সংরক্ষণের জন্য পানামা খাল কর্তৃপক্ষ নতুন যেসব নীতি নিয়েছে, সেগুলোও জাহাজজট তৈরির পেছনে প্রভাব ফেলেছে।
পানামায় চলতি বছর বর্ষাকাল আসতে বিলম্বিত হচ্ছে। এ কারণে কয়েক মাস ধরে এ খালে জাহাজ চলাচলের ওপর কিছু বিধিনিষেধ দিয়ে রেখেছে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ। গত সপ্তাহে এই বিধিনিষেধ ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে সংস্থাটি। বর্তমান নিয়মে দৈনিক সর্বোচ্চ ৩২টি অনুমোদিত জাহাজ খালটি দিয়ে পার হতে পারে।
সমুদ্রবিশেষজ্ঞ ও শিল্প সংস্থাগুলোর মতে, পানামা খাল দিয়ে চলমান বিধিনিষেধের কারণে বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্যের মূল্য পরিস্থিতির ওপর চাপ আরও বাড়বে। কারণ, বিধিনিষেধের কারণে জাহাজে করে পণ্য পরিবহনে বিলম্ব হচ্ছে এবং খরচ বাড়ছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ওই পথ দিয়ে আরও যেসব দেশ পণ্য পরিবহন করে, তাদের সার্বিক আমদানি ব্যয় বাড়বে।
এশিয়া অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভোগ্যপণ্যের চলাচলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পানামা খাল। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিসমাস মৌসুমের মতো উচ্চ চাহিদার সময়ে এ পথে পণ্য পরিবহনের পরিমাণ বেড়ে যায়। বিপরীতে এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের কিছু দেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য পরিবহন সহজ করে।
সাধারণত বৃষ্টির পানি ও পার্শ্ববর্তী পাহাড় থেকে প্রবাহিত পানি দিয়ে পানামা খালে পানির সংস্থান হয়। তবে দুই বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পরিমাণ কমে গেছে। ফলে খালের পানির স্তরও উল্লেখযোগ্যভাবে নিচে নেমে গেছে, যা শেষ পর্যন্ত পানামা খাল কর্তৃপক্ষকে (এসিপি) প্রতিনিয়ত যাতায়াতকারী জাহাজের সংখ্যা কমাতে বাধ্য করছে।
অন্যদিকে পানি সংরক্ষণের জন্য এসিপি খালটিতে বেশ কয়েকটি পরীক্ষামূলক পরিবর্তন করেছে। যেমন তারা খালটিকে পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত পানির পরিমাণ কমিয়েছে এবং জাহাজগুলোকে আরও ধীরগতিতে খালটি পার হওয়ার জন্য বলেছে। তবে এই পরিবর্তনগুলো খালের ধারণক্ষমতাকে কমিয়ে দিয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত জাহাজজট বাড়িয়েছে।
জাহাজজটের পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। তার একটি হলো, আগের তুলনায় জাহাজের আকার বৃদ্ধি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় জাহাজগুলোর যাতায়াতে সুবিধার জন্য পানামা খাল প্রশস্ত ও গভীর করা হয়েছে। বড় জাহাজগুলো খাল পার হতে বেশি সময় নেয়। এটিও জাহাজজটে অবদান রাখে।
এ ছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা খাল দিয়ে পণ্য পরিবহনও বেড়েছে। এটি বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও ই-কমার্সের উত্থানের কারণে হয়েছে। ফলে বাড়তি পরিবহনের জন্য জাহাজের সংখ্যাও বেড়েছে, যা খালের সক্ষমতার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
এসিপি জানিয়েছে, তারা উভয় পাশের জাহাজজট নিরসনে কাজ করছে। সংস্থাটি আশা করছে, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে খালের পানির স্তর বাড়বে। তবে দেশটিতে খরা অব্যাহত থাকলে পানামা খালের কার্যক্রমে আরও স্থায়ী পরিবর্তন আনতে হতে পারে।
তবে এ ঘটনা বিশ্ববাসীকে আরেকবার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করছে। কারণ, পানামা খালটি ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো অনুভব করতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে তা খালটিকে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।