অর্থসংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা ১০ বছরের জন্য বৈদেশিক দেনা পরিশোধ স্থগিত রাখতে চায়। প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের দপ্তর থেকে এ কথা জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ২৯০ কোটি ডলারের একটি সম্ভাব্য আর্থিক পুনরুদ্ধার ঋণ পাওয়ার ঠিক আগে এমন বক্তব্য এল।
প্রেসিডেন্টের দপ্তর তাঁকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘আইএমএফের ওই বহুল প্রত্যাশিত ঋণ পাওয়া গেলে তা আমাদের কেবল একটু নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ দেবে। আমরা শুধু এটুকুই বলতে পারব যে আমরা আর দেউলিয়া নই।’ খবর এএফপির
কলম্বোতে রোববার তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের এ বছর যত অর্থ পরিশোধ করতে হবে, আমি আশা করি, এ অর্থ পরিশোধ করতে আমাদের কমপক্ষে আরও ১০ বছর সময় দেওয়া হবে।’
শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। প্রেসিডেন্ট অবশ্য বিস্তারিত বলেননি যে তিনি ঋণ পুনর্গঠনের জন্য ঠিক কী পরিকল্পনা করছেন।
গত বছরের এপ্রিল মাসে শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। ওই সময় দেশটি তার ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। কলম্বোর হাতে তখন কোনো অর্থ ছিল না, ফলে এমনকি অতি প্রয়োজনীয় আমদানিও করতে পারেনি। তখন বড় রকমের গণ–অসন্তোষও সৃষ্টি হয়।
আর্থিক অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ, খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের দারুণ সংকট এবং বেড়ে চলা মূল্যস্ফীতির কারণে সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে পালাতে হয়। এরপর তিনি তাঁর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। গত জুলাই মাসে এসব ঘটনা ঘটে।
আর্থিক পুনরুদ্ধারের অর্থ পেতে কলম্বো যে আবেদন করেছে, আইএমএফ সোমবার আরও পরের দিকে তা অনুমোদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতা চীনের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেতে দেরি হওয়ার কারণে আইএমএফের ঋণের বিষয়টি বিলম্বিত হয়।
বেইজিং এর আগে বলেছে যে তারা শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে ঋণ আদায় দুই বছরের জন্য স্থগিত রাখবে। কিন্তু এ ঘোষণা আইএমএফের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছিলেন, চলতি মাসেই আইএমএফের কাছ থেকে ঋণের অর্থের প্রথম কিস্তি পাওয়া যাবে।
দর–কষাকষির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণ পুনর্গঠনের শর্ত আগামী জুনের মধ্যে সব পক্ষকে মেনে নিতে হবে। ওই সময় আইএমএফ ঋণ কর্মসূচি পর্যালোচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ঋণ পুনর্গঠনের ব্যাপারে সবাই একমত না হলে শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ উত্তোলন করতে পারবে না।’
কলম্বো আশা করছে, আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি হলে শত শত কোটি ডলারের বিদেশি সাহায্যও পাওয়া যাবে। গত বছর ঋণ পরিশোধে দেশটির ব্যর্থতার পর এসব প্রকল্প স্থগিত হয়ে যায়।
আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে শ্রীলঙ্কার সরকার এরই মধ্যে আরোপিত কর দ্বিগুণ করেছে, জ্বালানির দাম তিন গুণ বাড়িয়েছে এবং ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়েছে। তবে কৃচ্ছ্রসাধনের কর্মসূচি গত সপ্তাহে নতুন প্রতিবাদের জন্ম দেয়। ফলে স্বাস্থ্যসেবা এবং সরবরাহ বিঘ্নিত হয়।
প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহে অবশ্য পরিষ্কার করেই বলেছেন যে আইএমএফের কর্মসূচি মেনে নেওয়া ছাড়া তাঁর হাতে আর কোনো বিকল্প নেই।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর গত বছর শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সবচেয়ে নিচে নেমে যায়। ফলে দেশটির অর্থনীতি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হয়।