পরিষেবার মূল্য নির্ধারণ ও ছাড়ের ক্ষেত্রে যোগসাজশের অভিযোগে ডিএইচএল, ইউপিএস ও ফেডএক্সের মতো বৈশ্বিক কিছু সরবরাহ কোম্পানির দেশীয় ইউনিটের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে ভারতের প্রতিযোগিতা কমিশন (সিসিআই)। ২০২২ সালে ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান পাবলিশার্সের করা এক অভিযোগের ভিত্তিতে এ তদন্ত করছে সিসিআই।
রয়টার্স জানিয়েছে, বৈশ্বিক সরবরাহ খাতের প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারির এটি সাম্প্রতিক উদাহরণ। এর আগে ২০১৫ সালে গোপন যোগাযোগমাধ্যমে সেবামূল্য নির্ধারণের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডএক্স, জার্মানির ডিএইচএলসহ ২০টি কোম্পানিকে প্রায় ৭৩৫ মিলিয়ন বা ৭৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার জরিমানা করেছিল ফ্রান্স।
ডেলিভারি কোম্পানিগুলোর সেবামূল্য নির্ধারণে যোগসাজশের অভিযোগে ২০২২ সালের অক্টোবরে ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান পাবলিশার্স ভারতের প্রতিযোগিতা কমিশনের কাছে একটি অভিযোগ করে। পাবলিশার্সের অভিযোগে বলা হয়, ফেডএক্স-ডিএইচএলসহ কিছু দেশীয় প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীরা বিমানবন্দরের ডেলিভারি পরিষেবার পরিমাণ, ভাড়া, মূল্যছাড় ও স্টোরেজের মতো বাণিজ্যিক সংবেদনশীল তথ্য নিজেদের মধ্যে বিনিময় করেছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা যোগসাজশ করে একসঙ্গে পরিষেবা চার্জ ও মূল্যছাড় নির্ধারণ করেন।
ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান পাবলিশার্স আরও অভিযোগ করে, কিছু কোম্পানি করোনার সময় জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দামের কথা উল্লেখ করে ১৭ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানি সারচার্জ নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে যখন জ্বালানির এ দাম কমে আসে, তখন তারা আর সারচার্জ কমায়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করেছে সিসিআই।
তদন্তের অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিমানবন্দর পরিষেবার জন্য ডেলিভারি কোম্পানিগুলোর আদায় করা শুল্ক যাচাই করছে সিসিআই। এ জন্য সংস্থাটি কয়েক হাজার ই–মেইল পর্যালোচনা শুরু করেছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দেশটির প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে ভারত। সরকারি কয়েকটি নথি ও সূত্রের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
এদিকে সিসিআইও তাদের একটি প্রাথমিক মূল্যায়নে বলেছে, ডেলিভারি কোম্পানিগুলো নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করছে বলে মনে হচ্ছে। এ বিষয়ে তারা আরও বড় পরিসরে তদন্ত করবে। সব প্রমাণ সংগ্রহের জন্য প্রতিষ্ঠানটি আগামী মার্চ পর্যন্ত সময় চেয়েছে।
ভারতের প্রতিযোগিতা কমিশন এ বিষয়ে রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি। অন্যদিকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফেডএক্স স্পষ্টভাবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রয়টার্সকে ফেডএক্স বলেছে, তারা সিসিআইয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। আর জার্মানির ডিএইচএল ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড পার্সেল সার্ভিস (ইউপিএস) বলেছে, তারা সর্বদা আইনি বিষয় মেনে চলে এবং তদন্তে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করছে। তবে দুবাইয়ের আরামেক্স ও ভারতীয় ডেলিভারি কোম্পানিগুলো রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দেয়নি।
গবেষণা সংস্থা মরডর ইন্টেলিজেন্সের তথ্যানুসারে, ই-কমার্সের চাহিদা বাড়ায় ভারতে কুরিয়ার, এক্সপ্রেস ও পার্সেল ডেলিভারি পরিষেবার বাজার দ্রুত বড় হচ্ছে। প্রতিবছর এ বাজার ১৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর ২০২৯ সালের মধ্যে এ বাজার ১ হাজার ৮৩০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে।
ডিএইচএল ২০২২ সালে বলেছিল, তারা ভারতকে একটি অগ্রাধিকার বাজার বলে মনে করে। এ জন্য দেশটিতে তারা গুদামজাতকরণ ও কর্মিবাহিনী সম্প্রসারণের জন্য ৫৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করবে। আরেক কোম্পানি ফেডএক্স গত মাসে একটি প্রযুক্তি ও ডিজিটাল উদ্ভাবন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগের কথা জানিয়েছিল।