ডলার
ডলার

ভারতের বাজারে ফিরতে শুরু করেছে বিদেশি বিনিয়োগ

অবশেষে ভারতের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ফিরতে শুরু করেছে। মাঝে দুই মাস সাধারণ নির্বাচন নিয়ে নানা অনিশ্চয়তার জেরে ভারতের শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল বিনিয়োগকারীরা। কেন্দ্রে সরকার গঠনের পর চলতি জুন মাসে ভারতের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ফিরতে শুরু করেছে।

ভারতের দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড জানিয়েছে, ২১ জুন পর্যন্ত ভারতের শেয়ারবাজারে ১২ হাজার ১৭০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। তৃতীয় মেয়াদে মোদি সরকারের সংস্কার ও আর্থিক প্রবৃদ্ধির গতি বহাল থাকার প্রত্যাশা থেকে বিনিয়োগকারীরা ভারতের বাজারে ফিরতে শুরু করেছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

চলতি বছরের শুরু থেকেই ভারতের বাজার নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তায় আছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ২৫ হাজার ৭৪৩ কোটি রুপির শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে তারা অবশ্য শেয়ার বিক্রি করেনি; বরং সে মাসে তারা ৩৫ হাজার ৯৮ কোটি রুপি বিনিয়োগ করে। মার্চ মাসে বিদেশিদের শেয়ার কেনা অনেকটা কমলেও তারা মোট ১ হাজার ৫৩৯ কোটি রুপি বিনিয়োগ করে। এপ্রিল মাসে তারা তুলে নেয় ৮ হাজার ৭০০ কোটি রুপি। মে মাসে ভোট চলাকালে সরকার গঠন নিয়ে অনিশ্চয়তার জেরে তারা আরও ২৫ হাজার ৫৮৬ কোটি রুপি তুলে নেয়।

দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরে ভারতের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যত অর্থ বিনিয়োগ করেছেন, তার চেয়ে তুলে নিয়েছেন বেশি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগকারীরা সব সময় কেন্দ্রে স্থায়ী ও শক্তিশালী সরকার চায়। সংস্কার বা নীতি নিয়ে যেন কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হয়, সে জন্যই শক্তিশালী সরকার তাদের কাম্য। সেদিক থেকে অবশ্য বাজার অনেকটা হতাশ। ধারণা করা হয়েছিল, বিজেপি এবারও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসবে। শেষমেশ তা হয়নি। বুথফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশ থেকে শুরু করে ভোট গণনার দিন পর্যন্ত ভারতের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উত্থান-পতন হয়েছে।

তবে তারপরও ভারতের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ফিরছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে পরামর্শক সংস্থা ফিডেলফোলিয়োর প্রতিষ্ঠাতা কিশলয় উপাধ্যায় ভারতের দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, বাজার মনে করছে, সরকার স্থিতিশীল হবে। মোদি সরকারও আগের সংস্কারমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। যদিও পুঁজির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলেও বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ফেরার অন্যতম কারণ চীনের অর্থনীতি নিয়ে বাজারের তেমন প্রত্যাশা না থাকা। এখন পর্যন্ত তারা নির্দিষ্ট কিছু শেয়ার কিনতে আগ্রহী। এ ছাড়া বাজেটে অর্থনীতির পালে হাওয়া দেওয়ার লক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এ অনুমানও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করছে। ঋণপত্রের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ অবশ্য অব্যাহত আছে।

এই টানাপোড়েনের মধ্যে গত মাসের শেষ দিকে ভারতের শেয়ারবাজারের মূলধন পাঁচ লাখ কোটি ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। বিএসই ও এনএসই—উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের মোট মূল্য পাঁচ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। চলতি মাসে বাজারের মূল সূচক সেনসেক্স ৭৭ হাজার পয়েন্টের ঘর স্পর্শ করেছে।

ফলে যুক্তরাষ্ট্র, হংকং ও জাপানের মতো বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর কাতারে উঠে এসেছে ভারত। অর্থনীতিকে আরও চাঙা করার ক্ষেত্রে তা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই মাইলফলক অর্জনের কারণে ভারতে বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ বাড়বে বলেই বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন।