ভারতীয় রুপি
ভারতীয় রুপি

রুপির দর সর্বকালের সর্বনিম্ন, এক ডলারে ৮৫ রুপি

ভারতীয় মুদ্রা রুপির দরপতন চলছেই। গতকাল বুধবার রুপির মান ডলারের বিপরীতে সর্বনিম্ন পর্যায়ে যাওয়ার রেকর্ড গড়ার পর আজ সকালে আরও পতন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ডলারের বিপরীতে ৮৫ দশমিক শূন্য ৬ রুপি পাওয়া যাচ্ছে।

বুধবার ১ ডলারের বিপরীতে রুপির মূল্য দাঁড়ায় ৮৪ দশমিক ৯৫। দিনের মাঝামাঝি যা ৮৪ দশমিক ৯৬ রুপিতে উঠে গিয়েছিল। মঙ্গলবার ৮৪ দশমিক ৯০ রুপিতে বন্ধ হয়েছিল বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের বাজার। ভারতের মুদ্রার দরপতনের সঙ্গে শেয়ার সূচকেরও পতন হচ্ছে। খবর ইকোনমিক টাইমস

মূলত তিনটি কারণে ভারতের মুদ্রা রুপির দরপতন হচ্ছে। প্রথমত, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে। দ্বিতীয়ত, ভারতের শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ চলে যাচ্ছে, অর্থাৎ ডলার বেরিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যঘাটতি বৃদ্ধি পাওয়া।

নভেম্বর মাসে ভারতের বাণিজ্যঘাটতি ৩৭ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৭৮৪ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে, অক্টোবর মাসে যা ছিল ২৭ দশমিক ১৪ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৭১৪ কোটি ডলার। একদিকে স্বর্ণ আমদানি বাড়ছে, আরেক দিকে রপ্তানির দুর্বলতা বাড়ছে, এই দুটি কারণে বাণিজ্যঘাটতি বেড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর শুল্ক বাড়ালে আরও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে ভারতের রপ্তানি।

শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার কমানোর কথা ঘোষণা করতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, এবার প্রায় ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমানো হতে পারে। এতে দেশটিতে অর্থের সঞ্চালন বাড়বে। আরও চাঙা হবে শেয়ারবাজার।

বাজার বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রাথমিকভাবে শক্তিশালী অর্থনীতি এবং সুদের হার কমানোর কারণে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ডলারের প্রতিপত্তি অব্যাহত থাকবে। নভেম্বরে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রা রুপির দর হু হু করে কমছে। ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকেও মুখ ফিরিয়ে রয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বড় একটি অংশ। অবিলম্বে পরিস্থিতির বদল না হলে তা আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

সিএনবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে ফেডারেল রিজার্ভ দুবার নীতি সুদহার কমাতে পারে, যদিও এর আগে তারা চারবার পর্যন্ত সুদহার হ্রাসের আভাস দিয়েছিল। ২০২৫ সালে ২ দশমিক ৫ শতাংশ গড় মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস দিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। সংগত কারণে নীতি সুদ বেশি কমাবে না তারা।

ডলার ইনডেক্সের মান দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে গেছে। ফলে রুপিসহ বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের মুদ্রা চাপের মুখে পড়ে গেছে।

এদিকে গত তিন কার্যদিবসে ভারতের শেয়ার সূচকের পতন হয়েছে। বুধবার ৫০০ পয়েন্ট পড়ে গেছে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক। বড়দিনের আগে কিছুতেই লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা।

ডিসেম্বরের শুরু থেকে ভারতের বাজারে এ অস্থিরতা চলছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতেও সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি সেনসেক্স ও নিফটি। ১৩ ডিসেম্বর বাজার মূলধন নেমে যায় ৪৬৯ লাখ কোটি রুপিতে। তিন দিন টানা পতনের জেরে সেই মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫৩ লাখ কোটি রুপি।