মূল্যস্ফীতি
মূল্যস্ফীতি

উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে নাকাল দুই–তৃতীয়াংশ মার্কিন নাগরিক

যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার গত বছর অনেকটা কমলেও তার প্রভাব এখনো অনেকের জীবনে অনুভূত হচ্ছে। ফেডারেল রিজার্ভের পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পূর্ণবয়স্ক মানুষের অবস্থার অবনতি হয়েছে। প্রতি ছয়জনে একজন মাসিক পরিষেবা বিল পরিশোধ করতে পারেননি।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেডারেল রিজার্ভ গতকাল মঙ্গলবার ইকোনমিক ওয়েল বিয়িং অব ইউএস হাউসহোল্ড রিপোর্ট ফর ২০২৩ প্রকাশ করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণবয়স্ক মানুষ ও পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭২ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক মানুষ বলেছেন, আর্থিকভাবে তাঁরা ঠিকঠাক আছেন। এই হার গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। ২০২১ সালে এই হার ছিল ৭৮ শতাংশ। ২০১৩ সালে এই হার ছিল এ–যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে কম—৬২ শতাংশ।

তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ৬৫ শতাংশ পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৯ শতাংশ বলেছে, তাদের অবস্থা আগের চেয়ে অনেকটা খারাপ হয়েছে।

ফেডারেল রিজার্ভের জরিপের বিভিন্ন সূচকের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন করা হয়, যেমন কর্মসংস্থান, আয়, ব্যাংকিং ও ঋণ, গৃহায়ণ, অবসর পরিকল্পনা, ছাত্র ঋণ, শিশু সেবা এমনকি ‘এখন কিনুন পরে মূল্য পরিশোধ করুনের’ মতো প্রস্তাব মানুষ কতটা গ্রহণ করে, তা–ও এর মধ্যে চলে আসে।

প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সবাই খুব ভালো অবস্থায় নেই, যদিও কর্মসংস্থান ও মজুরি বৃদ্ধির হার ভালো। তিন বছরের বেশি সময় ধরে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সেখানে বিরাজ করছে, তার প্রভাব মার্কিন নাগরিকদের জীবনে অনুভূত হচ্ছে।

কম খাবার, স্বাস্থ্যসেবা না নেওয়া

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ১ শতাংশে উঠে যায়; ঠিক সেই সময় এই বাস্তবতা ছিল। অর্থাৎ ব্যয় কুলিয়ে উঠতে না পেরে মানুষ খাওয়া কমিয়ে দেয় এবং এমনকি স্বাস্থ্যসেবা নেওয়াও কমিয়ে দেন। তবে সেই অবস্থা এখন নেই। এপ্রিল মাসে দেশটির ভোক্তা মূল্যসূচক ৩ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে।

গত ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের আয় ভালোই বেড়েছে; একই সঙ্গে মানুষের ব্যয়ও বেড়েছে। মানুষের মাসিক বাজেট সীমাবদ্ধ ছিল। এ ছাড়া দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ব্যয় করার পর গত বছর অর্ধেকের বেশি পূর্ণবয়স্ক মানুষের হাতে বাড়তি টাকা থাকত না। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এ কথা বিশেষভাবে সত্য ছিল। এই শ্রেণির মানুষের বড় একটি অংশের অভিযোগ ছিল যে তাঁরা যথেষ্ট খেতে পারছেন না বা সব পরিষেবা মাশুল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শরীর খারাপ হলেও অনেকে চিকিৎসকের কাছে যেতে পারছিলেন না।

সামগ্রিকভাবে ১৭ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক মানুষ জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁদের পক্ষে সব পরিষেবা মাশুল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।

এই প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফেডের গভর্নর মিশেল বাওম্যান বলেন, এই জরিপ থেকে পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে, মার্কিন নাগরিকেরা কীভাবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করছেন; এতে ফেডের নীতি প্রণয়নে সুবিধা হবে।

শিশু সেবা

২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে সিংহভাগ মার্কিন নাগরিকের আর্থিক পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তন না হলেও একটি ক্ষেত্রে অবনতি দেখা গেছে। সেটা হলো যেসব পরিবারে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোর আছে, সেসব পরিবারের অবস্থার অবনতি হয়েছে। এই শ্রেণির মানুষ মধ্যে ৬৪ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁরা ঠিক আছেন; আগের বছর যা ছিল ৬৯ শতাংশ, ২০২১ সালে ছিল ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, শিশুদের ভরণপোষণ করতে গিয়ে পরিবারের আর্থিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।

বিশেষ করে যেসব পরিবারে শিশুর বয়স তুলনামূলকভাবে কম, ২০২৩ সালে শিশু ভরণপোষণ বাবদ তাদের ব্যয় বেড়েছে। আবাসন বাবদ এসব পরিবার যে ব্যয় করে, তার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ব্যয় হয়েছে শিশুর ভরণপোষণে।