ভারতের শেয়ারবাজারের নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন চার ট্রিলিয়ন ডলার বা চার লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে দিয়ে ভারতের শেয়ারবাজারের মোট বাজার মূলধন হংকং স্টক এক্সচেঞ্জের কাছাকাছি চলে গেছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর বিপর্যয়কর প্রভাব ও তার পরবর্তী সময়ের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও ভারতের শেয়ারবাজার নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এর মধ্য দিয়ে ভারতের স্টক মার্কেট বিশ্বের পরাশক্তি হয়ে উঠেছে। এত দিন যে তকমা ছিল কেবল যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জাপানের স্টক এক্সচেঞ্জের।
চলতি বছর ভারতের বাজারে শেয়ারের মূল্য ২৫ শতাংশ বেড়েছে। ফলে ভারতীয় স্টক এক্সচেঞ্জের মোট বাজার মূলধন ৪ দশমিক ১৬ ট্রিলিয়ন বা ৪ লাখ ১৬ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচক চলতি বছর ১৯ শতাংশ কমেছে এবং খুব শিগগির তারা ভারতের পেছনে পড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক হচ্ছে নিফটি ও সেনসেক্স। চলতি বছর এই দুই সূচক নতুন উচ্চতায় উঠেছে। এ বছর নিফটির প্রবৃদ্ধি রয়েছে ১৮ শতাংশ আর সেনসেক্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
বাজার গবেষণা সংস্থা আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়াংয়ের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাস ভারতের শেয়ারবাজারে দেড় শতাধিক নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। একই সময় হংকং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে মাত্র ৪২টি কোম্পানি। সেনসেক্স গতকাল বুধবার ৭২ হাজার পয়েন্টে উঠে নতুন উচ্চতা স্পর্শ করেছে।
বর্তমানে বিশ্বের যেসব স্টক এক্সচেঞ্জের বাজারমূল্য ভারতের চেয়ে বেশি, সেগুলো হচ্ছে—যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ ও নাসডাক, চীনের সাংহাই এক্সচেঞ্জ, ইউরোনেক্সট, জাপান স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ।
ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমাবে, বাজারে এমন খবর চাউর হওয়ার পর ভারতের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনা বেড়েছে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করেছে। কিন্তু নীতি সুদহার কমানোর খবর আসায় তারা পরবর্তীকালে বিক্রির তুলনায় অনেক বেশি শেয়ার কিনেছে। সে কারণে বছরের শেষভাগে ভারতের শেয়ারবাজারের নাটকীয় উত্থান হয়েছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ব্রোকারেজ সংস্থা সিএলএসএর আশা, ভারত আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে। এখন ভারতের জিডিপি ৩ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার। আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে ভারত জাপানকে টপকে যাবে। তারপর আগামী ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি ২৯ ট্রিলিয়ন বা ২৯ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছাবে।
সিএলএসএ বলেছে, আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে। শুধু চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ভারতের তুলনায় এগিয়ে থাকবে। বড় ধরনের সংস্কার হলে ২০৫২ সালের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি আকারের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে শেয়ারবাজারের সম্মিলিত মূল্য সেই অনুপাতে বা তার চেয়ে বেশি হারে বাড়বে।
জিডিপি দ্বিগুণ হলে শেয়ারবাজারের সম্মিলিত মূল্যও দ্বিগুণ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দালাল স্ট্রিটের বিশ্লেষকদের মতে, আগামী পাঁচ বছরে মূল সূচকগুলো দ্বিগুণ হবে।