ঘুষ ও প্রতারণা-কাণ্ডের জেরে আরেকবার ধাক্কা খেল ভারতের আদানি গোষ্ঠী। এবার আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি আদানি গোষ্ঠীর তিনটি কোম্পানির ঋণমান কমিয়ে ‘নেগেটিভ’ বা নেতিবাচক করেছে। অর্থাৎ আদানি গোষ্ঠীর ওই সব কোম্পানিকে ঋণ দেওয়া এখন ঝুঁকিপূর্ণ। অর্থ পরিশোধ হওয়া নিয়ে সংশয় আছে।
এসঅ্যান্ডপির দাবি, যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগীয় দপ্তর ও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি গৌতম আদানি ও তাঁর ভাতিজা সাগরের (সঙ্গে আরও কয়েকজন কর্মকর্তা) বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে, তাতে আদানি গোষ্ঠীর সার্বিক ভাবমূর্তিতে ধাক্কা লাগবে। আবার প্রশ্নের মুখে পড়বে কোম্পানিগুলোর পরিচালনব্যবস্থা। ঋণমান কমে যাওয়ায় বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ কঠিন হতে পারে তাদের জন্য। খবর ইকোনমিক টাইমসের
আদানি গ্রিন এনার্জি, আদানি ইলেকট্রিসিটি ও আদানি পোর্টসের ঋণমান নেতিবাচক করা হয়েছে।
বিষয়টি হলো, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ভারতীয় আদানি গ্রুপের চেয়ারপারসন গৌতম আদানি যুক্তরাষ্ট্রে ঘুষ ও প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। বলা হয়েছে, তিনি ২৫ কোটি মার্কিন ডলারের ঘুষ–কাণ্ডে জড়িত এবং বিষয়টি গোপন রেখে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে অর্থও সংগ্রহের অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার জেরে গত বৃহস্পতিবার ধস নেমেছিল আদানিদের শেয়ারে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১০টি কোম্পানির শেয়ারের দাম ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে ২২ দশমিক ৬১ শতাংশ কমেছিল। তাদের বাজার মূলধন কমে গিয়েছিল ২ দশমিক ১৯ লাখ কোটি রুপি; গতকাল শুক্রবার লেনদেনের শুরুতে পতন অব্যাহত থাকলেও পরে তাদের ছয়টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ে।
ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রশ্ন, কীভাবে শেয়ারের দাম বাড়ল? বিদেশি রাষ্ট্রের এমন গুরুতর অভিযোগের পরও কারা কিনছে আদানিদের সংস্থার শেয়ার—বিষয়টা খতিয়ে দেখা দরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক দিনের মধ্যে শেয়ারের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু তা কতটা স্থায়ী হবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
বাজার–সংশ্লিষ্টদের একাংশের দাবি, সন্দেহের কারণ এসঅ্যান্ডপির প্রতিবেদন। সেখানে বলা হয়েছে, আদানি গোষ্ঠীর সব কোম্পানিতেই এ ঘটনার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তাদের শেয়ার বা ঋণপত্রের বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহে সমস্যা হতে পারে। পুরোনো বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমতে পারে; নতুন বিনিয়োগকারীরা দূরে সরে থাকতে পারেন। ব্যাংকসহ আর্থিক কোম্পানিগুলো ঋণের রাশ টানতে পারে; বেড়ে যেতে পারে মূলধন সংগ্রহের ব্যয়।
গত বছর জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের শর্টসেলার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছিল আদানি গোষ্ঠীর ভাবমূর্তি। প্রশ্ন উঠেছিল এই গোষ্ঠীর পরিচালনব্যবস্থা নিয়ে। প্রতিবেদনের অভিযোগ ছিল, গোষ্ঠীর কোম্পানিগুলোর শেয়ারের মূল্য কৃত্রিমভাবে বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদেশে বেআইনিভাবে লেনদেন করেছে এই গোষ্ঠী।
এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে নাকচ করেছিলেন গৌতম আদানি। এবারও আদানি গোষ্ঠী একই দাবি করেছে—তারা কখনোই নিয়ম ভেঙে ব্যবসা করে না।