চীনের অর্থনীতি চাঙা করতে বিপুল ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। দেশটির শীর্ষ পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্যয়ের এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এবার দ্বিতীয় ধাপে সরকারি বিনিয়োগের জন্য খাত নির্বাচন করা হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে দুর্যোগকালীন ত্রাণ কর্মসূচিতে এই ব্যয় করা হবে।
অর্থনীতি চাঙা করতে গত অক্টোবরে বন্ড ইস্যু ও বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নেয় চীনের কেন্দ্রীয় সরকার।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, চীন সরকার অর্থনীতি চাঙা করতে এক লাখ কোটি ইউয়ান বিনিয়োগের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় ধাপে ১৪০ বিলিয়ন বা ১৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ৮০০ বিলিয়ন ইউয়ান বা ৮০ হাজার কোটি ইউয়ান বিনিয়োগ করবে।
চীনের ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশন (এনডিআরসি) গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, আপাতত ৫৬০ বিলিয়ন ইউয়ান বা ৫৬ হাজার কোটি ইউয়ান বিনিয়োগের লক্ষ্যে ৯ হাজার ৬০০টি প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো, অতিরিক্ত এক লাখ কোটি ইউয়ান ব্যয়ের কারণে চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট ঘাটতি বাড়বে। এখন যার পরিমাণ জিডিপির ৩ শতাংশ, তা ৩ দশমিক ৮ শতাংশে উঠে যাবে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি এই সংবাদ নিশ্চিত করেছে।
এনডিআরসি বলেছে, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে চীনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও আপৎকালীন ব্যবস্থা গ্রহণের পদ্ধতি উন্নত হবে। সেই সঙ্গে মানুষের জানমালের নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নত হবে, সে জন্য বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ।
সংস্থাটি আরও বলেছে, এসব প্রকল্পের অর্থ ছাড় করতে যেন দেরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে অন্যান্য সরকারি দপ্তরের সঙ্গে কাজের সমন্বয় করা হবে। সেই সঙ্গে প্রকল্পের উচ্চমান বজায় রাখার চেষ্টা করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ ও চীনের অর্থনীতির কাঠামোগত সমস্যার কারণে দেশটির প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে টানা তিন বছর সময়-সময় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে, দেশটি যখন অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন করে শ্রমঘন উৎপাদন থেকে উচ্চপ্রযুক্তিতে যাওয়ার চেষ্টা করছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র চীনে প্রযুক্তি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এতে দেশটির অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়েছে।
এদিকে আগামী কয়েক বছরে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়লেও চীনের কমবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস। ‘চায়না স্লোস ইন্ডিয়া গ্রোস’ বা ‘চীনের গতি কমে যাচ্ছে, ভারতের বাড়ছে’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে এসঅ্যান্ডপির ধারণা প্রকাশ করেছে যে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র চীন থেকে সরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে চলে আসবে।
ইকোনমিক টাইমসের এক সংবাদে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থার পূর্বাভাস, ২০২৪ সালে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে, ২০২৫ সালে যা ৪ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। এরপর ২০২৬ সালে তা আবার ৪ দশমিক ৬ শতাংশে নামতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা ৬ দশমিক ৯ শতাংশ এবং তারপরের বছর ২০২৫-২৬ সালে তা ৭ শতাংশ স্পর্শ করতে পারে।