এবার গৌতম আদানির তালিকাভুক্ত ১০ কোম্পানির মধ্যে ৭টিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ভারতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি।
তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে শেয়ারবাজারের নিয়ম না মানা ও সম্পর্কিত পক্ষের (রিলেটেড পার্টি) সঙ্গে লেনদেনসংক্রান্ত বিধিভঙ্গের অভিযোগের ভিত্তিতে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে শেয়ারবাজার কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার
যে সাতটি কোম্পানিকে এই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো আদানি এন্টারপ্রাইজ, আদানি এনার্জি সলিউশনস, আদানি গ্রিন এনার্জি, আদানি পোর্টস, আদানি পাওয়ার, আদানি টোটাল গ্যাস ও আদানি উইলমার।
গত বছরের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার লেনদেন ও গবেষণা সংস্থা হিনডেনবার্গ রিসার্চের এক প্রতিবেদনে রীতিমতো ঝড় ওঠে। তাদের অভিযোগ, আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানিগুলো কৃত্রিমভাবে শেয়ারদর বাড়িয়ে প্রতারণা করার পাশাপাশি বেআইনি লেনদেন করত। এর মধ্য দিয়ে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়েছে। এরপরই তদন্তে নামে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি।
অবশেষে সেই ধারাবাহিকতায় গৌতম আদানির তালিকাভুক্ত ১০ কোম্পানির মধ্যে ৭টির বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ জারি করে তারা। ফলে আদানিদের বিরুদ্ধে হিনডেনবার্গের প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে আবারও শোরগোল তৈরি হয়েছে ভারতের সংশ্লিষ্ট মহলে।
বিষয়টি একই সঙ্গে রাজনৈতিক রং পেয়েছে। সেবির নোটিশ জারির কথা প্রচার হতেই গতকাল আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হয়েছে কংগ্রেস। দলের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বিবৃতিতে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে টালবাহানার পরে এবং সুপ্রিম কোর্টের চাপে সেবি আদানিদের বিরুদ্ধে প্রথম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হলো।
সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, সেবির এই নোটিশ ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে হিনডেনবার্গ রিসার্চের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যে তদন্ত তারা শুরু করেছিল, তারই অংশ। যদিও আদানি গোষ্ঠী আবারও যথারীতি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, শোকজ নোটিশ কোনো অভিযোগ নয়, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের কাছে কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে।
আদানিদের যেসব কোম্পানিকে সেবি কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে গোষ্ঠীর প্রধান সংস্থা আদানি এন্টারপ্রাইজেস, আদানি গ্রিন এনার্জি ও আদানি টোটাল গ্যাস লিমিটেড স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছে, সেবি নোটিশ পাঠিয়েছে গোষ্ঠীর হোল্ডিং কোম্পানিকে বা মূল সংস্থাকে। পাশাপাশি আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন, আদানি পাওয়ার, আদানি এনার্জি সলিউশনস ও আদানি উইলমার জানিয়েছে, তারা সেবির নোটিশ পেয়েছে। সেবির ওই নোটিশ মূলত সংস্থাগুলোর ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের হিসাবসংক্রান্ত বলে উল্লেখ করে সব কটি সংস্থা দাবি করে, কোনো আইন ভঙ্গ করা হয়নি।
আদানি গোষ্ঠী এমন দাবি করলেও বিবৃতিতে কংগ্রেসের সম্পাদক জয়রাম রমেশ স্মরণ করিয়ে দেন, গৌতম আদানির ওইসব কোম্পানির একাধিক সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছিল। আদানি পোর্টসের নিরীক্ষক ডেলয়েট হাসকিনস অ্যান্ড সেলস সংস্থার ২০২২-২৩ সালের অডিট প্রতিবেদনে এমন একাধিক লেনদেনের দিকে আঙুল তোলা হয়।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে হিনডেনবার্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর রীতিমতো লন্ডভন্ড হয়ে যায় গৌতম আদানির ব্যবসা সাম্রাজ্য। তাঁর সম্পদমূল্য ১০ হাজার কোটি ডলার কমে যায়। বিশ্বে ধনীদের তালিকায় পাঁচের মধ্যে থাকা আদানি চলে যানে ২০-এর ঘরে। এরপর অবশ্য ধীরে ধীরে ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে উঠেছেন আদানি।
আজ এই প্রতিবেদন লেখার সময় গৌতম আদানির সম্পদমূল্য ছিল ৮০ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ৪০ কোটি ডলার। ফোর্বস ম্যাগাজিনে ধনীদের তালিকায় তাঁর স্থান এখন ১৭তম।