চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অন্যান্য প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো কতটা বিনিয়োগ করতে পারবে, সে–বিষয়ক নিয়মকানুন চূড়ান্ত করেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা মনে করে, চীনের এসব খাতে বিনিয়োগ তাদের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে।
২০২৩ সালের আগস্ট মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষরিত এক নির্বাহী আদেশের ভিত্তিতে চলতি বছরের জুন মাসে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাবের খসড়া প্রস্তুত করেছে। নির্বাহী আদেশে মূলত তিনটি খাতে বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো সেমিকন্ডাক্টর, মাইক্রোইলেকট্রনিকস কোয়ান্টাম ইনফরমেশন টেকনোলজি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক অন্যান্য খাত। খবর রয়টার্সের
২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের নবসৃষ্ট বিভাগ অফিস অব গ্লোবাল ট্রানজেকশনস বিষয়টি দেখভাল করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ এসব প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ সীমিত করার যুক্তি হিসেবে বলেছে, ভবিষ্যতের সামরিক ও নিরাপত্তা অভিযানে এসব ব্যবহৃত হবে। তারা মনে করছে, সামরিক বাহিনী, সাইবার নিরাপত্তা, নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতার আধুনিকায়নে এসব প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে। ফলে এসব প্রযুক্তি কার হাতে থাকবে, তার সঙ্গে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার সম্পর্ক আছে।
মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পল রোজেন বলেন, এই বিধিবিধানে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও সামরিক হার্ডওয়্যার আছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রযুক্তি দিয়ে গুপ্ত সংকেতব্যবস্থা ভেঙে ফেলা সম্ভব। যে সামরিক হার্ডওয়ারের কথা বলা হয়েছে, তা দিয়ে আগামী দিনের যুদ্ধবিমান তৈরি করা হবে।
মোদ্দাকথা হলো, যেসব দেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ আছে, সেসব দেশকে উচ্চ প্রযুক্তি বিকাশে যুক্তরাষ্ট্র কোনো রকম সহায়তা করবে না। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ও জ্ঞান ব্যবহার করে চীন বিশ্ববাজারে প্রভাব বিস্তার করবে—যুক্তরাষ্ট্র তা হতে দিতে চায় না।
নতুন এই বিধিতে কিছু ছাড়ও দেওয়া হচ্ছে। মার্কিন বিনিয়োগকারীরা চীনের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোয় বিনিয়োগ করতে পারবে। বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞায় চীনের যেসব কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের জন্য হুমকি, সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের হাউস সিলেক্ট কমিটি মার্কিন বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে অনেকটা উচ্চকণ্ঠ। তারা মনে করে, মার্কিন কোম্পানিগুলো চীনের এমন সব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছে, যেগুলোর সঙ্গে দেশটির সামরিক বাহিনীর যোগ আছে। সে কারণে বিনিয়োগের ওপর নজরদারি বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে এত তোড়জোড়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভেঞ্চার ক্যাপিটালের অন্যতম গন্তব্য ছিল চীনের প্রযুক্তি খাত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে ইতিমধ্যে চীনে যুক্তরাষ্ট্রের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগ অনেকটাই কমে গেছে। নতুন এই বিধির কারণে তা আরও অনেকটা কমে যাবে বলেই ধারণা করছেন বাজার-বিশ্লেষকেরা।
২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর চীনের বিভিন্ন পণ্যে আমদানি শুল্ক আরোপ করে বাণিজ্যযুদ্ধের সূত্রপাত করেন। সেই যুদ্ধ এখনো চলছে। প্রযুক্তি–যুদ্ধ বা চীনের প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া সেই নীতিরই সম্প্রসারণ। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধ শুরু করলেও বাইডেন প্রশাসন তা অব্যাহত রেখেছে।