কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বড় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে চাকরি ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা

বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) দক্ষতা বাড়াতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করে চলেছে। নতুন বছরেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এতে চাকরি ছাঁটাইয়ের নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অন্তত গুগল ও অ্যামাজনের মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সাম্প্রতিক কর্মী ছাঁটাই সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে। খবর রয়টার্সের।

প্রযুক্তি খাতে ২০২৩ সালে সর্বাধিক আলোচিত বিষয় ছিল এআই। অ্যালফাবেট, মাইক্রোসফট, অ্যামাজন ও মেটার মতো বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে এআই দক্ষতা বাড়াতে। মেটার প্রধান নির্বাহী (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ ২০২৩ সালকে ‘দক্ষতার বছর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে একই সঙ্গে গত বছর প্রযুক্তি খাতে রেকর্ডসংখ্যক চাকরি ছাঁটাইয়ের ঘটনাও প্রত্যক্ষ করেছে।

বিশ্লেষকেরা বলেন, চলতি ২০২৪ সালেও জেনারেটিভ এআই খাতে দক্ষতা বাড়াতে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ থাকবে। এ জন্য কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করবে শত শত কোটি ডলার। ফলে কোম্পানিগুলো অন্যান্য খাতে তাদের খরচ কমানোর চেষ্টা করবে। এর অংশ হিসেবে তারা সুনির্দিষ্টভাবে চাকরি ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে পারে।

নতুন বছরের শুরুতেই পিক্সেল, নেস্ট ও ফিটবিটের জন্য গুগলের হার্ডওয়্যার, কোর ইঞ্জিনিয়ার ও গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট দল থেকে কয়েক শ কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। অন্যান্য প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানও পিছিয়ে নেই। যেমন অ্যামাজন গত সপ্তাহে তার স্ট্রিমিং ও স্টুডিও অপারেশন বিভাগের কয়েক শ কর্মী ছাঁটাই করেছে।

ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট লেঅফস এফইআইয়ের তথ্য অনুসারে, চলতি জানুয়ারি মাসে এ পর্যন্ত প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো সাড়ে সাত হাজারের বেশি কর্মীকে চাকরি থেকে বাদ দিয়েছে। সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ডি এ ডেভিডসন অ্যান্ড কোম্পানির বিশ্লেষক গিল লুরিয়া বলেন, কোনো সংস্থাই এআই বিপ্লব থেকে পিছিয়ে থাকতে চায় না। সব প্রতিষ্ঠানই এআইকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং এটা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে যে এআইয়ে তাদের সক্ষমতা রয়েছে।

রয়টার্স বলছে, গুগল ও অ্যামাজন উভয় প্রতিষ্ঠানই তাদের এআই প্রকল্পে আগ্রাসীভাবে বিনিয়োগ করছে। গত ডিসেম্বরে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট জিমিনি এআই নামে উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাপ্রযুক্তি চালু করেছে। আর গত সপ্তাহে অ্যালফাবেটের আরেক প্রতিষ্ঠান আইসোমরফিক ল্যাবস ওষুধ কোম্পানি নোভারটিসের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ওষুধ তৈরির বিষয়ে একটি চুক্তি করেছে। আরেক প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন চ্যাটজিপিটির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ‘অলিম্পাস’ নামে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল তৈরি করছে। নতুন এসব বিনিয়োগ পরিকল্পনার ব্যয় শতকোটি ডলারের বেশি হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

তবে চলতি বছর কর্মী ছাঁটাই অব্যাহত থাকলেও তা গত বছরের তুলনায় অনেক কম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ক্যারিয়ারবিষয়ক প্রতিষ্ঠান চ্যালেঞ্জার, গ্রে অ্যান্ড ক্রিসমাসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, বিদায়ী ২০২৩ সালে প্রযুক্তি খাতে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩২ জন চাকরি হারিয়েছেন। প্রযুক্তি খাতে এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ চাকরি ছাঁটাইয়ের ঘটনা।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবালডেটার বিশ্লেষক বিট্রিজ ভ্যালে বলেন, ‘আমি মনে করি না যে গত বছরের মতো একই রকম হিসাব থাকবে। গত বছর প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো করোনা মহামারি চলাকালে তাদের নিয়োগ করা কর্মচারীদের বাদ দিয়েছিল। এ বছর আর তেমনটা হবে না। এআই প্রসার লাভ করায় বরং প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিয়োগের অগ্রাধিকার বদলাতে পারে।’