আকুর সঙ্গে সম্পর্কিত লেনদেন নিষ্পত্তিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব ফরেন অ্যাসেট কন্ট্রোল (ওএফএসি) সে দেশের ব্যাংকগুলোকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর সঙ্গে সম্পর্কিত লেনদেন নিষ্পত্তি না করার জন্য যে নির্দেশনা জারি করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের ব্যাংকগুলো দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বা আরবিআইয়ের দ্বারস্থ হয়েছে।

আকুর সদস্যদেশগুলো হলো বাংলাদেশ, ভুটান, ইরান, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা।

এ বিষয়ে ভারতের এক জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার ইকোনমিক টাইমসকে বলেছেন, ‘আকুর প্রধান কার্যালয় যেখানে অবস্থিত, সেই বিষয় নিয়ে কিছু একটা ঘটেছে। আমাদের এমন ধারণা দেওয়া হয়েছে যে (ওএফএসি) যুক্তরাষ্ট্রের সব সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে অর্থ পরিশোধপ্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে বলেছে।’

আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা এসকাপের উদ্যোগে আকু গঠিত হয়। এর প্রধান কার্যালয় ইরানের রাজধানী তেহরানে।
ভারতের সঙ্গে আকুর সদস্যদেশগুলোর লেনদেনের ভিন্ন মাধ্যম নেই। সে কারণে ভারতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আরবিআইয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। তারা এই সমস্যার সমাধান চায়। তবে ইকোনমিক টাইমস এ বিষয়ে আকু ও আরবিআইয়ের মন্তব্য চাইলেও তারা সাড়া দেয়নি।

ভারতের সমস্যা হলো দেশটি আকুর সদস্যদেশগুলোতে যত পণ্য রপ্তানি করে, তাদের কাছ থেকে আমদানি করে কম। সে কারণে ভারতের বড় অঙ্কের অর্থ আটকা পড়ে গেছে। ২০২০ সালে আকুর মাধ্যমে ভারতের লেনদেন হয়েছে ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৮৪০ কোটি ডলার।

এ বাস্তবতায় ২০২২ সালে আরবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে ভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়। তারা রুপির আন্তর্জাতিকীকরণের অংশ হিসেবে আকুর সদস্যদেশগুলোর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনের পরামর্শ দেয়।

ভারতের এক সরকারি কর্মকর্তা ইকোনমিক টাইমসকে জানিয়েছেন, আকু ইতিমধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনের দিকে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে একক মুদ্রার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে আকুর সদস্যদেশগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। সে কারণে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা ভবিষ্যতে প্রভাব ফেলবে না।’

সরকারি কর্মকর্তা যতই বলুন না কেন, ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্দেশনার কারণে ভারত ভুক্তভোগী হতে পারে। বাংলাদেশ, ইরানসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত আছে, সেটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আকু হচ্ছে একটি আন্ত-আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিকারী সংস্থা। এর মাধ্যমে আন্ত-আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি হয়। আকুর মাধ্যমে লেনদেনের সুবিধা হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে লেনদেনের পুরো অর্থ পরিশোধ করতে হয় না, বরং পরস্পরের কাছে তাদের ঠিক কী পরিমাণ দেনা আছে, তা বাদ দিয়ে বাকি অর্থ পরিশোধ করে তারা। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে আকুর সদস্যদেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক লেনদেন আরও জটিল হয়ে যেতে পারে।