ভারতের পর এবার রাশিয়া থেকে ছাড়কৃত মূল্যে জ্বালানি তেল কিনছে পাকিস্তান। এ নিয়ে মস্কো ও ইসলামাবাদের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। আগামী মে মাসেই তেলবাহী প্রথম জাহাজ পাকিস্তানের করাচি বন্দরে ভিড়বে।
পাকিস্তানের পেট্রোলিয়ামমন্ত্রীর বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর রাশিয়ার জ্বালানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় পশ্চিমা দেশগুলো। এই বাস্তবতায় গত এক বছরে রাশিয়া ভারত ও চীনে জ্বালানি তেল বিক্রি বৃদ্ধি করেছে। বস্তুত, রাশিয়া এখন ভারতের সবচেয়ে বড় তেল সরবরাহকারী। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হলো পাকিস্তান।
বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে পাকিস্তান। রিজার্ভ তলানিতে ঠেকেছে। রুপির রেকর্ড দরপতন হয়েছে—২৭৯ রুপির বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে এক ডলার। ফলে আমদানি সীমিত করতে হয়েছে তাদের। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া থেকে ছাড়কৃত মূল্যে তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান সরকার। এতে দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে চাপ কমবে। কমবে মূল্যস্ফীতিও, স্বস্তি পাবে সাধারণ মানুষ।
চুক্তি অনুসারে, পাকিস্তান শুরুতে কেবল অপরিশোধিত তেল কিনবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে রাশিয়া থেকে দিনে এক লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করবে তারা। দেশটির পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী মুসাদিক মালিক গত বুধবার রাতে রয়টার্সকে এ কথা বলেন।
২০২২ সালে পাকিস্তান দিনে গড়ে ১ লাখ ৫৪ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে, যা তার আগের বছরের চেয়ে অনেকটাই কম। তথ্য বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান কেপলারের সূত্রে রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। অপরিশোধিত তেলের বেশির ভাগ তারা আমদানি করেছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।
এই বাস্তবতায় রাশিয়া থেকে পাকিস্তান দিনে এক লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি অনেকটাই কমবে।
তবে কত দামে এই তেল কেনা হচ্ছে বা কোন মুদ্রায় তা কেনা হচ্ছে, সে বিষয়ে রয়টার্সকে কিছু জানাননি পাকিস্তানের পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন এই চুক্তির বাণিজ্যিক দিক সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না।
এদিকে হিন্দুস্তান টাইমস সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বেশ কয়েকবার রাশিয়া থেকে সস্তায় নয়াদিল্লির তেল আমদানির সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, ইসলামাবাদ এই চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।
ইমরান খান এ–ও বলেছেন, তাঁর সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় রাশিয়া থেকে সস্তায় অপরিশোধিত তেল কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ নিয়ে দুই দেশে কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়। কিন্তু তাঁর সরকারের পতনের জন্য সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
এবার শাহবাজ শরিফের সরকার রাশিয়া থেকে তেল কেনার চুক্তি করতে পেরেছে।
এদিকে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইশাক দার অর্থনীতি সম্পর্কে ভালো একটি খবর দিয়েছেন। গতকাল বুধবার এক টুইটে তিনি জানান, মার্চে পাকিস্তান চলতি হিসাবের ঘাটতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। ফেব্রুয়ারিতে যেখানে চলতি হিসাবের ঘাটতি ছিল ৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার, মার্চে সেখানে উদ্বৃত্ত আছে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার।