মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর জাতীয় ঋণসীমা স্থগিত করা এবং কেন্দ্রীয় বাজেট হ্রাসের বিষয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও হাউস স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির মধ্যে আগেই ঐকমত্য হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সে বিষয় একটি বড় বাধা অতিক্রম করেছে। এ–সংক্রান্ত বিলটি আজ বুধবার ভোটাভুটির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে উঠবে।
দুই পক্ষের মধ্যে হওয়া সমঝোতার বিষয়টি হাউস অব রুলসে ৭-৬ ভোটে অনুমোদিত হয়েছ। ফলে, এখন তা পুরো কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা হবে। তবে রিপাবলিকান পার্টির দুজন সদস্য চিপ রয় ও রালফ নরম্যান পার্টির সঙ্গে দ্বিমত করে বিলের বিরোধিতা করছেন।
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে রিপাবলিকানদের কিঞ্চিৎ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, সেই সঙ্গে দুজন রিপাবলিকানের পার্টির সঙ্গে দ্বিমত করার ঘটনায় এটা পরিষ্কার, এই বিল পাস করাতে ডেমোক্র্যাটদের সাহায্য লাগবে।
প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়ার পর বিলটি সিনেটে যাবে। আগামী ৫ জুনের আগে এই বিলে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে, তা না হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। সেটা হলো, সরকারের আর্থিক দায় মেটানোর মতো অবস্থা তখন তাদের থাকবে না।
সে রকম পরিস্থিতি হলে, অর্থাৎ দায় মেটানোর মতো অবস্থা সরকারের না থাকলে বা তাদের যদি কেবল বিশেষ কিছু ব্যয় মেটাতে বাধ্য হতে হয়, তাহলে মার্কিন অর্থনীতি তো বটেই, পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতিতেই টালমাটাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
তবে রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, বাইডেন ও ম্যাকার্থি পূর্বাভাস দিয়েছেন, আগামী ৫ জুনের আগে ৯৯ পৃষ্ঠার এই বিল পাস হয়ে আইনে পরিণত হবে।
কংগ্রেসের এক নির্দলীয় বাজেট কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, এই বিল পাস হলে কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট আগামী ১০ বছরে দেড় লাখ কোটি ডলার কমাতে হবে, ২০২৪ সাল থেকে যা শুরু হবে।
এদিকে দেশটির কংগ্রেসনাল বাজেট কার্যালয় বলেছে, এই বিল পাস হলে সরকারের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় ১৮৮ বিলিয়ন বা ১৮ হাজার ৮০০ কোটি ডলার কমবে।
হাউসের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি অবশ্য এই বিলকে দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে রক্ষণশীল চুক্তি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
তবে রিপাবলিকান দলের কিছু সদস্য বাজেট আরও কাটছাঁটের পক্ষে। দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতায় যে ব্যয় হ্রাসের অঙ্গীকার আছে, তারা তার সঙ্গে একমত নন। সে কারণে এখন ডেমোক্র্যাটদের সহায়তা দরকার হবে। তা না হলে ম্যাককার্থি বিপদেই পড়বেন।
এদিকে রুলস কমিটির চারজন ডেমোক্র্যাট সদস্য এই বিলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। রিপাবলিকানদের নেতৃত্বে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হলে তাঁরা সাধারণত এমনটাই করেন। আজ বুধবার হাউসের অন্যান্য ডেমোক্র্যাট সদস্যদের তাঁরা এর বিপক্ষে ভোট দিতে প্ররোচিত করবেন কি না, তা পরিষ্কার নয়। যদিও ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিস বলেছেন, ম্যাককার্থিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।
এদিকে ডেমোক্র্যাট পার্টির অনেক সদস্যই চেয়েছিলেন, বাইডেন যেন বাজেট হ্রাসের শর্তে রিপাবলিকানদের সঙ্গে আলোচনা না করেন।
যেসব বিষয়ে দুই পক্ষের ঐকমত্য
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণসীমা স্থগিত রাখা হবে। ফলে বাইডেন সরকার নতুন ঋণ নিয়ে প্রতিশ্রুত সব অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। এর বিনিময়ে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিরক্ষা ব্যতীত অন্যান্য খাতে স্বেচ্ছাধীন ব্যয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়াতে পারবে না, ২০২৫ সালে যা মাত্র ১ শতাংশ বাড়ানো যাবে।
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিরক্ষা ব্যতীত অন্যান্য খাতে ৯৩৬ বিলিয়ন ডলার স্বেচ্ছাধীন ব্যয় করবে বলে জানা গেছে।
প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি
জাতীয় ঋণসীমা বৃদ্ধির বিনিময়ে বাইডেন সরকারকে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় ১১ শতাংশ বাড়াতে হবে; যদিও ২০২৪ সালের বাজেটে তা বাইডেনের প্রস্তাবের মধ্যে ছিল। তাতে প্রতিরক্ষা ব্যয় ৮৮৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।
কোভিডের তহবিল ফেরত আনা
কোভিড বাবদ যত বরাদ্দ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার, তার মধ্যে ৫০ থেকে ৭০ বিলিয়ন ডলার অব্যবহৃত রয়ে গেছে। এর মধ্যে টিকাবিষয়ক গবেষণা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত তহবিলও ছিল। এই তহবিল ফেরত আনার বিষয়ে বাইডেন ও ম্যাকার্থির মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে।
জ্বালানি খাতের অনুমোদন
দুই নেতার ঐকমত্যের আরেকটি দিক হলো, জ্বালানি এমনকি জীবাশ্ম জ্বালানিবিষয়ক প্রকল্পে দ্রুত অনুমোদন দেওয়া হবে। কেভিন ম্যাকার্থি ও রিপাবলিকান পার্টির কাছে এটি চুক্তির অন্যতম দিক। ডেমোক্র্যাটরাও গত মাসে এই দাবির প্রতি সমর্থন জানান।
তবে মূল্যস্ফীতি সুরক্ষা আইনে পরিবেশগত যে দিক ছিল, বাইডেন তা নস্যাৎ হতে দেননি বলে রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে।