ভারতের বিমান সংস্থাগুলোর অবস্থা কয়েক বছর ধরেই ভালো নয়। কিংফিশার, জেট এয়ারওয়েজের পর এবার ওয়াদিয়া গোষ্ঠীর গো ফার্স্টের অবস্থাও শোচনীয় হয়েছে। ভারতের ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনালের কাছে দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার আবেদন করেছে তারা।
ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গো ফার্স্টের অর্ধেক বিমান বসিয়ে রাখা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে ৩ থেকে ৫ মের উড়ান। ফলে চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন যাত্রীরা। নিজেদের দুর্গতির জন্য তাদের বিমানের ইঞ্জিন নির্মাণকারী কোম্পানি প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনিকে দোষারোপ করেছে গো ফার্স্ট।
অথচ এমন একসময়ে গো ফার্স্ট তাদের ফ্লাইট বাতিল করল, যখন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলের চাহিদা তুঙ্গে। জানা গেছে, ৩ থেকে ৫ মে পর্যন্ত ৯০ হাজার যাত্রীর গো ফার্স্টের বিমানে ভ্রমণ করার কথা ছিল। যাত্রীদের ভাড়া ফেরত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।
ইকোনমিক টাইমস গো ফার্স্টকে উদ্ধৃত করে জানায়, তাদের নগদ অর্থের অভাব গুরুতর হয়ে উঠেছে। সে কারণে বুধ ও বৃহস্পতিবার তাদের অর্ধেকের বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। গত রাতে জানা যায়, মুম্বাই ও আহমেদাবাদের মতো বিভিন্ন বিমানবন্দর গো ফার্স্টের বিমান নামতে দিচ্ছে না। কারণ আর কিছু নয়; বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, গো ফার্স্টের পক্ষে বিমানবন্দরের ভাড়া পরিশোধ করা সম্ভব হবে না।
১৭ বছরের পুরোনো গো ফার্স্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কৌশিক খোনাকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অর্থের অভাবে বসিয়ে রাখতে হচ্ছে বিমান। কোম্পানিকে এ অবস্থা থেকে রক্ষা করতে বাধ্য হয়েই ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনালে (এনসিএলটি) দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গো ফার্স্ট তাদের বিমানে প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনির ইঞ্জিন ব্যবহার করে। অর্থের অভাবে নতুন ইঞ্জিন আনা যাচ্ছে না, তাই ২৫টি বিমান বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। ইঞ্জিনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও করা যাচ্ছে না। পুঁজি না থাকায় যন্ত্রাংশ কেনা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই আর্থিক দায়ও পূরণ সম্ভব নয়।
ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতের বিমানবন্দরগুলো গো ফার্স্টকে বাকিতে সেবা দিচ্ছিল না। গো ফার্স্ট বলেছে, অর্ধেক বিমান মাটিতে নামিয়ে রাখার কারণে তাদের ক্ষতি হবে ১০ হাজার ৮০০ কোটি রুপি। সে কারণে প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনির কাছে তারা ৮ হাজার কোটি রুপি ক্ষতিপূরণ চেয়েছে। এই অর্থ পেলে ঋণদাতাদের দায় পরিশোধ শুরু করতে পারবে তারা। তবে তারা এও বলেছে, তাদের পক্ষে এখন আর আর্থিক দায়ভার মেটানো সম্ভব হবে না।
কৌশিক খোনা আরও বলেন, গত তিন বছরে ৩ হাজার ২০০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করে তাঁদের লাভ হয়নি। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আগেই অবহিত করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএর কাছে শিগগিরই প্রতিবেদন দেবে গো ফার্স্ট।
কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার আবেদন মঞ্জুর হলেই গো ফার্স্ট আবার নিয়মিত উড়ান পরিচালনা করবে। তবে সে জন্য দুই দিন লেগে যাবে। তবে এই সিদ্ধান্তে গো ফার্স্টের প্রায় ৫ হাজার কর্মীর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বলেছেন, এ ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। তবে কেন্দ্রীয় সরকার গো ফার্স্টকে সব রকম সাহায্য করছে।