মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত আরও জোরালো হওয়ার কারণে ইসরায়েলি মুদ্রা শেকেলের দামে পতন ঘটেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ডলারের বিপরীতে শেকেলের দর প্রায় ৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে নেমে গেছে। ফিলিস্তিনি হামাস গোষ্ঠী অনেকটা নাটকীয়ভাবে ইসরায়েলের ভেতরে হামলা চালানোর পর দেশটির আর্থিক বাজার চাপে পড়ে।
সোমবার এশিয়ার বাজারে ডলারের বিপরীতে শেকেলের দাম ৩ শতাংশ কমে যায় বলে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে। অন্যদিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে যে ইউরোপের বাজারে দিনের শুরুতে শেকেলের দাম ২ শতাংশ পড়ে যায় এবং দিন যত গড়িয়েছে, শেকেল তত দুর্বল হয়েছে। ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করার পরও শেকেলের পতন রোধ করা যায়নি।
শেকেলের দাম ধরে রাখার জন্য ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদেশি মুদ্রা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংক অব ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা ৩ হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা বিক্রি করবে।
এদিকে ইসরায়েলি সরকারি বন্ডের বিক্রি বেড়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়েছে, ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদের হার বেড়ে ৪ দশমিক ৬ শতাংশে উঠেছে, এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ইসরায়েলের শেয়ারবাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘তেল আবিব ৩৫’ সূচকে সোমবারও পতনের ধারা অব্যাহত ছিল। রোববার এই সূচক ৬ দশমিক ৫ শতাংশ কমে যায়, যা ছিল ২০২০ সালের মার্চের পর সবচেয়ে বড় পতন।
যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে ইসরায়েলের আকাশ পরিবহনেও। বেশির ভাগ বড় বিমান সংস্থা তেল আবিবে ফ্লাইট স্থগিত করেছে অথবা উড়ানের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। এসব বিমান কোম্পানি বলেছে যে ইসরায়েলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য তারা অপেক্ষা করছে।
এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এল আল। ইসরায়েলের এই জাতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা তাদের ফ্লাইটের সংখ্যা উল্টো বাড়িয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা রিজার্ভ সৈন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনা। হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে ইসরায়েল তার ইতিহাসের অন্যতম বড় সৈন্য সমাবেশ ঘটাতে চলেছে।
বিমান চলাচল সীমিত হওয়ার কারণে অবশ্য ইসরায়েলের পর্যটন খাত বেশ বিপদে পড়েছে। কোভিড মহামারির পর দেশটিতে পর্যটক বাড়ছিল। তবে লড়াইয়ের কারণে সেই পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে। ইসরায়েলে কর্মসংস্থানের সাড়ে ৩ শতাংশের বেশি আসে পর্যটন খাত থেকে।
তেলের দাম
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের দ্রুত প্রভাব পড়েছে তেলের দামের ক্ষেত্রে। রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার তেলের দাম ৩ শতাংশ বেড়েছে। অপরিশোধিত ব্রেন্ট তেলের দাম বেড়ে প্রতি ব্যারেল হয়েছে ৮৭ দশমিক ২৮ ডলার। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে হয়েছে ৮৫ দশমিক ৫৭ ডলার। তবে দিনের শুরুতে তেলের দাম ৪ শতাংশের বেশি বেড়েছিল।
অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ ব্যাংকের বিশ্লেষক বিবেক ধর এক নোটে বলেছেন, দীর্ঘ মেয়াদে তেল সরবরাহ ও পরিবহন কমলে তেলের বাজারে লম্বা সময়ের জন্য এই সংঘাত প্রভাব ফেলবে।
বিবেক ধর আরও বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে হামাসের হামলার সঙ্গে ইরানি গোয়েন্দা বাহিনীর সম্পৃক্ততার কথা বললে দেশটির তেল সরবরাহ ও রপ্তানি হুমকির মুখে পড়বে।
এদিকে বিনিয়োগকারীরা ইসরায়েলের ঘটনাবলির দিকে গভীর নজর রাখছেন। সংঘাতের কারণে অনেক বিনিয়োগকারী তাঁদের সম্পদ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। হামাসের হামলার পর ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি কতটা মারাত্মক হয়, সেটি খতিয়ে দেখছেন এসব বিনিয়োগকারী।
ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বেড়ে গেলে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ ও ডলারের মতো সম্পদে বিনিয়োগ বাড়ান। এবারে মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের চাহিদা বাড়তে পারে বলেও বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
স্পার্টান ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের বাজারবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ পিটার কারডিলো বলেন, কেন সম্পদের ঝুড়িতে সোনা রাখা দরকার, এটি তার একটি উদাহরণ। বিশ্বে যখন টালমাটাল করা ঘটনা ঘটে, তখন তা থেকে বাঁচতে এটাই সবচেয়ে ভালো পন্থা।
পিটার কারডিলো আরও মনে করেন যে এ ঘটনা থেকে ডলার সুবিধা পাবে। তিনি বলেন, যখনই বিশ্বের কোথাও এমন ঘটনা ঘটে, তখন ডলার শক্তিশালী হয়।
ইসরায়েলের পরিস্থিতি নিয়ে অ্যানেক্স ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান জেকবসেন বলেন, আর্থিক বাজারের জন্য এটি বিশাল কোনো ঘটনা হবে কি না, তা নির্ভর করবে এটি কত দীর্ঘস্থায়ী হয়, তার ওপর। এর মধ্যে অন্যরা জড়িয়ে পড়ে কি না, সেটির ওপরও তা নির্ভর করবে।
ব্রায়ান জেকবসেন আরও বলেন, মূল দেখার বিষয় হবে সৌদি আরব কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। ইসরায়েল ও সৌদি আরবে মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন।