যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন নির্বাচন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের কেন এত উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন। এই ভোটের মাধ্যমে একটি নাটকীয় মার্কিন নির্বাচনী চক্র শেষ হতে চলেছে। গত কয়েক মাসে বন্ড, শেয়ার ও অন্যান্য সম্পদের বাজারে এই নির্বাচনের বড় ধরনের প্রভাব অনুভূত হয়েছে। নানা পরিবর্তনর এসেছে। ফলাফল স্পষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে আরও প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর রয়টার্সের

চলতি বছরের নির্বাচন আধুনিক মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম অস্বাভাবিক নির্বাচন। এই নির্বাচনের ফলাফল দেশটির করব্যবস্থা, বাণিজ্যনীতি ও এমনকি প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রভাব ফেলবে। ট্রাম্প জিতলে এক রকম, কমলা জিতলে আরেক রকম।

আজ বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুরেই হয়তো নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। যা-ই হোক না কেন, এই নির্বাচনের ফলাফল বিশ্বজুড়ে সম্পদের বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে; এর ফলে বিস্তৃত পরিসরে আর্থিক অভিঘাত সৃষ্টি হতে পারে। মার্কিন ঋণের ভবিষ্যৎ, ডলারের শক্তি ও করপোরেট আমেরিকার মূল ভিত্তিতেও পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্টের মধ্যে বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, তা–ও এই নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের জায়গা হলো, যদি ফলাফল স্পষ্ট না হয় বা নির্বাচন বিতর্কিত হয়, তাহলে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বোস্টন পার্টনার্সের গ্লোবাল মার্কেট রিসার্চের পরিচালক মুলানি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় ৪০ বছরের বেশি সময় কাজ করেছেন। তাঁর ভাষ্য, ‘আমরা দেখা এটাই সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচন, এই নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিভক্ত কের দেবে।

নির্বাচনের দিকে এই মনোযোগের পেছনে বড় কারণ হলো মার্কিন শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক উত্থান। ২০২৪ সালে দেশটির অন্যতম শেয়ার সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের প্রায় ২১ শতাংশ উত্থান হয়েছে। শক্তিশালী অর্থনীতি, করপোরেট মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি ও ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর কারণে শেয়ার সূচকের এই উত্থান হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার মুদ্রাবাজারে রাতারাতি বড় ধরনের উত্থান-পতনের বিরুদ্ধে সুরক্ষার দাবি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে; ২০১৬ সালের নভেম্বরের নির্বাচনের পর এই দাবি এখন সবচেয়ে জোরালো।

নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে যেসব বাজি ধরা হয়েছে, দেশটির আর্থিক বাজারে তার বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, জনমত জরিপ ও বাজির বাজারে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির ফলে সম্পদের বাজারে প্রভাব পড়ছে। ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধি, কর হ্রাস ও নিয়ন্ত্রণ হ্রাসের প্রভাব সম্পদের বাজারে পড়তে পারে। ফলে যাঁরা এত দিন বিভিন্ন সম্পদে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা কিছুটা উদ্বিগ্ন।

এই তথাকথিত ট্রাম্প ট্রেডের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। যেমন মেক্সিকান মুদ্রা পেসোর মূল্য কমে যাচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের ট্যারিফ আরোপের সম্ভাবনা মেক্সিকোর অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। একই সঙ্গে ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপের শেয়ারের দরে বড় ধরনের ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। আঞ্চলিক ব্যাংক ও বিটকয়েনের মতো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ছে, নিয়ন্ত্রণ শিথিল হওয়ার সুবিধা এই প্রতিষ্ঠানগুলো পেতে পারে।

ট্রেজারি বন্ডের সুদও বাড়ছে, বন্ডের মূল্যের সঙ্গে এর সম্পর্ক বিপরীত। ট্রাম্পের নীতির কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে।

ট্রাম্পের কর হ্রাস ও নিয়ন্ত্রণ কমানোর নীতি বাস্তবায়িত হলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে; মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে পারে। সে কারণে ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বেড়েছে।

জন হ্যানকক ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের বিনিয়োগ কৌশলবিদ ম্যাট মিসকিন বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তা আছে। এ কারণে বাজার ওঠানামা করছে।’

হ্যারিসের বিজয়ে অবশ্য ভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাজারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ ও করহার বৃদ্ধির অঙ্গীকার করেছেন তিনি। করপোরেট আমেরিকা জগতে তার প্রভাব পড়তে পারে। তবে যে প্রার্থীই জিতুন না কেন, করনীতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসতে হলে কংগ্রেসের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে।

ঐতিহাসিক তথ্য বলছে, নির্বাচনের বছরের শেষভাগে মার্কিন শেয়ারবাজার ভালো করে, যে দলেরই জয় হোক না কেন। কারণ, বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক পরিস্থিতির স্পষ্টতায় স্বস্তি পান। কিন্তু এ বছর বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন, ব্যবধান খুব কম হলে বাজারে অনিশ্চয়তা বেড়ে যাবে। আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, নির্বাচন বিতর্কিত হয়ে উঠতে পারে, যেমনটা ট্রাম্প ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পরাজয়ের পরে করেছিলেন।

সাম্প্রতিক কালে নির্বাচন বিতর্কিত হওয়ার উদাহরণ বেশি না থাকলেও বিনিয়োগকারীরা ২০০০ সালের কথা স্মরণ করছেন। সেই নির্বাচনে ফ্লোরিডার ভোট পুনর্গণনার জন্য এক মাসের বেশি সময় ধরে নির্বাচনের ফলাফল ঝুলে ছিল। সেই সময়ে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ৫ শতাংশ কমে যায়। প্রযুক্তি কোম্পানির শেয়ার এবং সামগ্রিক অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়।

বিশ্লেষকেরা বলেন, নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বড় সমস্যা ২০০০ সালেও আমরা তা দেখেছি। এবার যখন ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে এত কিছু চলছে, তখন কী পরিস্থিতি হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যায়।