এবার যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান–বিষয়ক আভাস অবনমন করেছে ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস। দেশটির ঋণমান তারা ‘স্থিতিশীল’ থেকে অবনমন করে ‘ঋণাত্মক’ করেছে। কারণ হিসেবে যে দুটি বিষয়কে তারা চিহ্নিত করেছে, সে দুটি হলো, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ বেড়ে যাওয়া এবং তার ঋণ নেওয়ার সক্ষমতায় ভাটা পড়া।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় বাইডেন প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
কিছুদিন আগে আরেক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা ফিচ রেটিংসও দেশটির জাতীয় ঋণমান অবনমন করে। কারণ হিসেবে ফিচও দেশটির জাতীয় ঋণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছিল। এরপর মুডিস সেই একই পথে হাঁটল।
একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় বাড়ছে এবং আরেক দিকে রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটছে—এসব কারণে দেশটির অর্থনীতিতে একধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ড বিক্রির হিড়িক পড়ে যাওয়ায় বন্ডের সুদহার ১৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
এ পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকেরা যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব আয় নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে পথে যাচ্ছে, তাতে রাজস্ব ঘাটতি বিপজ্জনক পর্যায়ে উঠে যাবে। জাতীয় বাজেটের বড় একটি অংশ ব্যয় হবে সুদ পরিশোধে। এ কারণে জাতীয় ঋণ কেবল বাড়তেই থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেছে। চলতি বছর জাতীয় ঋণসীমা স্থগিত নিয়ে কংগ্রেসে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়—একদম শেষ মুহূর্তে উভয় দল এ নিয়ে ঐকমত্যে আসতে না পারলে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারত বিশ্বের এই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। তখন সেই পরিস্থিতি এড়াতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে রিপাবলিকান দলের প্রস্তাবিত বেশ কিছু ব্যয় কমানোর শর্ত মেনে নিতে হয়, কিন্তু তারপরও পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি বলেই দেখা যাচ্ছে।
এখনো যে দেশটির রাজনীতিকদের মধ্যে এ নিয়ে মতৈক্য সৃষ্টি হয়েছে, তা নয়। কংগ্রেসে রাজনীতিকদের মধ্যে এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। এ অনিশ্চয়তা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মুডিসের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ফস্টার রয়টার্সের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে ২০২৫ সালের আগে রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যে বড় ধরনের নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
সরকারের চলমান অর্থায়নের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যয় পরিকল্পনা পেশের পরিকল্পনা করছে রিপাবলিকান পার্টি। কংগ্রসের এই নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে।
ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থাগুলোর মধ্যেই কেবল মুডিস যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ ঋণমান বজায় রেখেছে, যদিও তারা এবার আভাস নেতিবাচক করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির শক্তি সম্পর্কে বলার পাশাপাশি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ নেওয়ার সক্ষমতা চাপের মুখে পড়বে বলে মনে করে মুডিস।
হোয়াইট হাউস অবশ্য এই পরিণতির জন্য রিপাবলিকান দলের কঠোর অবস্থানের সমালোচনা করেছে। দেশটির উপ–অর্থমন্ত্রী ওয়ালি আডেইমো বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মুডিস যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান এএএ বজায় রেখেছে ঠিকই; কিন্তু ঋণমানের আভাস নেতিবাচক করার সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করি। মার্কিন অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে আছে। ট্রেজারি সিকিউরিটি বন্ডগুলো বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ সম্পদ।’
অন্যদিকে রিপাবলিকান দলের ব্যয় হ্রাসের নীতি সম্পর্কে বেশ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের কট্টরপন্থী সদস্য অ্যান্ডি হ্যারিস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘আমরা বিবেকের তাড়না থেকেই সরকারকে যত খুশি ঋণ করতে দিতে পারি না। আমরা জানি, এতে আমাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিরা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঋণের বোঝার চাপে পড়বে।’
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ডেমোক্রেটিক দল বড় ধরনের কিছু ব্যয় পরিকল্পনায় সায় দিয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানার শুরুতে রিপাবলিকানরা বড় ধরনের কর হ্রাস করেছিল। কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয় যে বেড়ে যাচ্ছে, বিষয়টি কোনো দলই আন্তরিকভাবে মোকাবিলা করেনি। সেই সঙ্গে আছে মেডিকেয়ার কর্মসূচি—এ বাবদ কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটের বড় একটি অংশ ব্যয় হয়।