ভারতের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি আদানি গোষ্ঠী নিয়ে দেওয়া হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন সম্পর্কে বলেছে, হিনডেনবার্গ এই প্রতিবেদন দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যায্য বাণিজ্য রীতির আশ্রয় নিয়েছে। তারা আরও বলেছে, শর্ট সেলার কোম্পানি হিনডেনবার্গ নিউইয়র্কের এক হেজ ফান্ডের সঙ্গে যোগসাজশে এই প্রতিবেদন দিয়েছে।
এক কারণ দর্শাও নোটিশে সম্প্রতি সেবি বলেছে, হিনডেনবার্গ রিসার্চ ইচ্ছা করে কিছু তথ্য বিকৃত করে চমক তৈরির চেষ্টা করেছে। সাধারণত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আগে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়।
এদিকে হিনডেনবার্গ রিসার্চ এই নোটিশের জবাবে নিজেদের ওয়েবসাইটে বলেছে, যারা ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী ধনী ব্যবসায়ীর জালিয়াতির ঘটনা উন্মোচন করতে চায়, তাদের মুখ বন্ধ করতে এ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়ার পর ভারতের এই বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেকোনো কোম্পানিকে আর্থিক জরিমানা এবং এমনকি পুঁজিবাজারে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। সেবি হিনডেনবার্গ রিসার্চকে ২১ দিনের মধ্যে অভিযোগের জবাব দিতে বলেছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনে হিনডেনবার্গ রিসার্চ। তারা বলে, আদানি গোষ্ঠী কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি করে লাভবান হয়েছে। সেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর আদানি গোষ্ঠী বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে। সেই ধাক্কায় আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি কমে যায়। গ্রুপের মালিক গৌতম আদানি এর আগে শীর্ষ ধনীর বৈশ্বিক তালিকায় পাঁচের মধ্যে থাকলেও একপর্যায়ে ২০-এর ঘরে নেমে যান।
হিনডেনবার্গ রিসার্চের কাজই হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির দুর্বলতা খুঁজে বের করে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করা। এ কাজের উদ্দেশ্য হলো তাদের শেয়ারমূল্য কমিয়ে দেওয়া এবং সেখান থেকে লাভ করা।
নোটিশে যুক্তরাষ্ট্রের হেজ ফান্ড কিংডম ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করেছে সেবি। হিনডেনবার্গ যে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার শর্ট সেল করেছে, সেই প্রক্রিয়ায় তাদের নীরব অংশীদার ছিল কিংডম ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট। এই কোম্পানি ১৯৮৩ সালে নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত হয়। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে এই কোম্পানির সম্পদ ছিল ৬৪ কোটি ডলার।
সেবি ৪৬ পৃষ্ঠার নোটিশে হিনডেনবার্গ রিসার্চ ও কিংডমের মধ্যে সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে। ২০২২ সালের শেষ দিকে হিনডেনবার্গের সঙ্গে কিংডমের এই সম্পর্ক গড়ে ওঠে অর্থাৎ আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশের ঠিক আগে আগে।
হিনডেনবার্গ নিজেরাই বলেছে, আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার শর্টসেল করে তারা মোট ৪১ লাখ ডলার আয় করেছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আদানি গোষ্ঠীর যে বন্ড আছে, সেখান থেকে মোট ৩১ হাজার ডলার আয় করেছে তারা।
হিনডেনবার্গ বলেছে, দুই বছর ধরে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লেগে থাকার জন্য যে ব্যয় হয়েছে, এই গোষ্ঠীর শেয়ার শর্টসেল করে শেষ পর্যন্ত তারা সেই ব্যয় পুষিয়ে লাভের কিছু অর্থ ঘরে তুলতে পেরেছে।
সেবির অভিযোগের বিষয়ে হিনডেনবার্গ ও কিংডমের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস, কিন্তু তারা মন্তব্য করার লক্ষ্যে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
এদিকে হিনডেনবার্গ আরও বলেছে, তারা যে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত করল, সেবি সেই তদন্তে মনোযোগ দিল না। তাদের আরও অভিযোগ, সেবি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানির ওপর আইনি কর্তৃত্ব ফলানোর চেষ্টা করছে।
হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর সেবি অবশ্য আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে। এমনকি তাদের তদন্তে বেরিয়ে আসে, বিনিয়োগের সীমা ও ঘোষণাসংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘন করে আদানি গোষ্ঠীতে অফশোর তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে আদানি গোষ্ঠীর বেশ কিছু অফশোর বিনিয়োগকারীকে নোটিশও দিয়েছিল সেবি। কিন্তু এখন তারা উল্টো হিনডেনবার্গের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলল।
হিনডেনবার্গের ওয়েবসাইট বলছে, ২০১৭ সাল থেকে কমপক্ষে ১৬টি কোম্পানির সম্ভাব্য অনিয়ম তারা উদ্ঘাটন করেছে। এর মধ্যে একটি ছিল টুইটার। যেসব কোম্পানিকে তারা লক্ষ্যবস্তু বানায়, তাদের ক্ষেত্রে হিনডেনবার্গ কখনো ‘শর্ট’ আবার কখনো ‘লং’ অবস্থান নেয়। এতে শেয়ারের দাম ওঠানামা করে আর তার লাভের অর্থ ঘরে তোলে হিনডেনবার্গ।