প্রবৃদ্ধি
প্রবৃদ্ধি

২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে ভারত: এসঅ্যান্ডপি

২০৩০ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস। সেই সঙ্গে ২০৩৫ সালের মধ্যে সেই জায়গা পাকাপাকিভাবে ভারতের হয়ে যাবে।

সম্প্রতি লুক ফরয়োর্ড এমার্জিং মার্কেটস: আ ডিসাইসিভ ডিকেড’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসঅ্যান্ডপি এই পূর্বাভাস দিয়েছে। প্রতিবেদনে তারা বলেছে, ভবিষ্যতে উদীয়মান অর্থনীতিগুলো বিশ্ব অর্থনীতিতে মূল ভূমিকা পালন করবে। এখন থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে উদীয়মান দেশগুলোর গড় প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশে উন্নীত হবে, যেখানে উন্নত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশে নেমে আসবে। এই অগ্রযাত্রায় ভারতের ভূমিকা হবে নেতৃস্থানীয়। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের  

ভারত এখনই বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ। দিনে দিনে জনসংখ্যা আরও বাড়বে। এসঅ্যান্ডপি বলছে, সেটাই হবে ভারতের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। ক্রমবর্ধমান নাগরিকদের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিষেবা ও বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। এসঅ্যান্ডপি এটাই মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যেভাবে ভারতের জনসংখ্যা বাড়ছে, তা দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। পরিষেবা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আরেক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিজের বক্তব্য, জনসংখ্যা ও মানুষের জীবনমান বৃদ্ধির কারণে জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত গাড়ি বিক্রি বাড়বে। এতে ভারতের কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার কর্মসূচি চাপে পড়তে পারে।

এসঅ্যান্ডপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দশকে বিশ্ব অর্থনীতির চালিকা শক্তি হয়ে উঠবে উন্নয়নশীল দেশগুলো। বিশ্বের মোট প্রবৃদ্ধিতে তাদের অবদান হবে ৬৫ শতাংশ। উন্নয়নশীল দেশগুলোর নেতৃত্বে থাকবে ভারত, চীন ও ভিয়েতনামের মতো দেশ। ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদনের আকার ৩০ লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হবে।

আগামী ১০ বছরে ভারতের প্রবৃদ্ধিও গতি পাবে। তবে তার গতি-প্রকৃতি নির্ভর করবে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ওপর। গত বৃহস্পতিবার মুডিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। ২০২৪ সালের ভারতের ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। আগামী এক দশকেও ভারতের এই উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে।

এসঅ্যান্ডপি মনে করছে, দীর্ঘমেয়াদি ও উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন–পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হলে উন্নয়নের গতিপথ পরিষ্কার হয়। এ ধরনের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলে বোঝা যায়, নীতিপ্রণেতাদের দূরদর্শিতা আছে। এর মধ্য দিয়ে পুঁজি ও বিনিয়োগ আকর্ষণের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা যায়। সরকার তখন বেসরকারি খাতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে পারে।

এদিকে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, ভারতের প্রবৃদ্ধির হার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। সংস্থাটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গীতা গোপীনাথ বলেছেন, ২০২৭ সালের মধ্যেই ভারতের অর্থনীতি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হবে। সম্প্রতি ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গীতার দাবি, তিন বছরের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরের স্থান হবে ভারতের।

গীতা বলেন, ভারতের প্রবৃদ্ধির হার গত অর্থ বছরে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। ফলে চলতি বছরের পূর্বাভাসেও তার প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ভারতীয়দের ব্যক্তিগত ভোগব্যয় (ভোগ্যপণ্য কেনার নিরিখে) আবার বেড়েছে।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান জেফ্রিসের অর্থনৈতিক মূল্যায়নের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২৭ সালের মধ্যে জাপান ও জার্মানিকে ছাড়িয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে ভারত।