শ্রীলঙ্কার সামগ্রিক ঋণ মূল্যায়নের পর তাদের কাছ থেকে ঋণের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের বিষয়ে আশ্বাস চাইবে আইএমএফ।
ঋণগ্রস্ত শ্রীলঙ্কা আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষই অবশ্য কয়েক মাস ধরে আলাপ-আলোচনায় রয়েছে। তবে আইএমএফের ঋণ পাওয়া মুখের কথা নয়। এটি পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আইএমএফের একটি টেকনিক্যাল কমিটি আগামী বুধবার শ্রীলঙ্কা যাবে। খবর হিন্দুস্তান টাইমস-এর।
আইএমএফের টেকনিক্যাল কমিটি শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে। এরপর আগামী মাসে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার পর শ্রীলঙ্কার ঋণ পুনর্গঠন শুরু হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কার নেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৯৭ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৫১ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলারই বিদেশি উৎস থেকে নেওয়া। এতে জাপান, চীন, ভারত, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে নেওয়া দ্বিপক্ষীয় ঋণের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎস থেকে নেওয়া সার্বভৌম ঋণ রয়েছে। আইএমএফের কাছে শ্রীলঙ্কা অবশ্য বেশি ঋণ চাইছে না। মাত্র ২০০-৩০০ কোটি ডলার চায়।
আইএমএফের ওয়াশিংটন দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, শ্রীলঙ্কার সামগ্রিক ঋণ মূল্যায়নের পর তাদের কাছ থেকে ঋণের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের নিশ্চয়তা চাওয়া হবে।
শ্রীলঙ্কার সামগ্রিক ঋণ এখন তার জিডিপির চেয়েও বেশি। জুলাই মাসে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত কমে ১৮২ কোটি ডলারে নেমে গেছে। দেশটির বৈদেশিক মজুতের বড় উৎস হচ্ছে বিদেশি পর্যটক। কিন্তু করোনাভাইরাসের সময় পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন মন্দাভাবের কারণে আরেকবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে জানায়, তারা আপাতত বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। এরপর নতুন ঋণ পেতে তৎপরতা শুরু করে দেশটির সরকার।
গত বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক করে বলেছে, চলতি বছর দেশটির অর্থনীতি রেকর্ড ৮ শতাংশের বেশি সংকুচিত হতে পারে। আর দেশটিতে জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৬৫ শতাংশে উঠেছে।
পশ্চিমা বিশ্ব একটি কথা প্রচার করেছে, সেটা হলো চীনের কাছ থেকে অবকাঠামোগত ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। এটা ঠিক, হাম্বানটোটা বন্দর নির্মাণে চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করতে পারেনি দেশটি। সে জন্য এই বন্দরের পরিচালনা চীনের হাতে ছেড়ে দিতে হয়েছে। বাস্তবে শ্রীলঙ্কার মোট বৈদেশিক ঋণের মাত্র ১০ শতাংশ চীনের কাছ থেকে নেওয়া। তবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ কেবল চীনই নেয়। পশ্চিমা দেশ ও দাতাদের কাছ থেকে শ্রীলঙ্কা তাদের মোট ঋণের ৪৭ শতাংশ নিয়েছে। এর বড় একটি অংশ সার্বভৌম বন্ডের ঋণ। এই ঋণের মেয়াদ খুবই কম। ফলে শ্রীলঙ্কার একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধের চাপ থাকায় দেশটি বিপাকে পড়ে যায়।
অন্যদের কাছ থেকে শ্রীলঙ্কার নেওয়া ঋণের হিস্যা এ রকম: এডিবি ১৩ শতাংশ, জাপান ১০ শতাংশ, বিশ্বব্যাংক ৯ শতাংশ, ভারত ২ শতাংশ ও অন্যান্য উৎস ৯ শতাংশ।
দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও নিম্ন মূল্যস্ফীতি থাকলে সেটাকে বলা হয় স্বাস্থ্যকর অর্থনীতির লক্ষণ। জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়লে একদিকে জনগণ খেপে যায় এবং সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে, অন্যদিকে সরকার জনগণকে চাপে রেখে কাজ চালিয়ে যায়, কিন্তু অর্থনীতির নীতি, বাজেট ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সঠিকভাবে কাজ করে না। এতে অর্থনীতি আরও গর্তে পড়ে যায়। আর যেসব দেশ উৎপাদনে নজর না দিয়ে অতিমাত্রায় আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ে, তাদের অর্থনীতির বুদ্বুদ যেকোনো সময় ফেটে যাতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকায় সব ধরনের যানবাহন আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটান। তবে নিত্যপণ্য, কৃষি যন্ত্রপাতি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা কাজে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রপাতি আমদানি অব্যাহত থাকবে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব ভুটানেও পড়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির পাশাপাশি যুদ্ধের কারণে তেল ও শস্যের দামের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে দেশটি। আবার করোনাভাইরাস মোকাবিলায় শূন্য কোভিড নীতির কারণে দুই বছর ধরে বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশটিতে রিজার্ভ কমতে শুরু করেছে।