নীতিনির্ধারকদের শঙ্কা

আবারও বিশ্বব্যাপী মন্দার আশঙ্কা

বিশ্বজুড়ে আবার শুরু হয়েছে মন্দার আশঙ্কা। উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং তা মোকাবিলায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ—এই সবকিছু মিলে মন্দার আশঙ্কা বৃদ্ধি করছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন গবেষণা সংস্থা নেড ডেভিড রিসার্চ বলছে, বিশ্বজুড়ে মন্দার আশঙ্কা ৯৮ দশমিক ১ শতাংশ। এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, ‘এর অর্থ হচ্ছে, ২০২৩ সালে মন্দার আশঙ্কা তীব্র হচ্ছে।’


এর আগে ২০২০ সালে যখন বিশ্বজুড়ে লকডাউন ও নানা বিধিনিষেধ ছিল, তখনো নেড ডেভিসের পূর্বাভাস এমনটাই বেশি ছিল। এ ছাড়া ২০০৮-০৯ সালের আর্থিক মন্দার সময়ও তাদের সম্ভাব্যতার মডেলের স্কোর এমনটাই ছিল।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১০টি অর্থনীতির মধ্যে অন্তত সাতটি অর্থনীতি মনে করে, বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা আছে। অর্থনীতিবিদেরা প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস হ্রাস করেছেন এবং তাঁদের ধারণা, মূল্যস্ফীতি-সমন্বিত মজুরি চলতি বছরের বাকি সময় ও আগামী বছর হ্রাস পাবে। খবর সিএনএন ও আল-জাজিরার
খাদ্য ও জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্যের সাপেক্ষে জনমনে উদ্বেগ, উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কারণে বিশ্বের জায়গায় জায়গায় গণ-অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জরিপে অংশ নেওয়া অর্থনীতিবিদদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ মনে করেন, উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কারণে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোতে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেখানে উচ্চ আয়ের দেশের ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে বলে মনে করেন ২০ শতাংশ অর্থনীতিবিদ।

বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকারখানার সূচক ডাউ জোন্স ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর আবারও নিম্নমুখী হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে নীতি সুদহার বাড়াতেই থাকবে। এ বছরের মধ্যে তার রাশ টানা না গেলে আগামী বছরেও বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে আর ঠিক তখনই মন্দা শুরু হয়ে যাবে।
এদিকে ধনী দেশগুলোর সংগঠন ওইসিডির ধারণা, ২০২৩ সালে ইউরো অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। তাদের আশঙ্কা, ইউরোপের অনেক দেশই আগামী বছর মন্দার কবলে পড়বে।

এদিকে এশিয়ার বড় দেশের মধ্যে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার বাড়তে থাকলেও চীন এখনো শূন্য কোভিড নীতি অনুসরণ করছে। এখনো দেশটির বিভিন্ন স্থানে লকডাউন ও বিধিনিষেধ আছে। এতে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার কমছে। তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বা তাদের ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য যেসব দেশ আছে, তারাও সে কারণে ভুক্তভোগী হচ্ছে।
সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ; অথচ এপ্রিল মাসেই তাদের পূর্বাভাস ছিল ৫ শতাংশ।

এদিকে ২০০৮ সালের আর্থিক বিপর্যয়ের চেয়েও আরও ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হতে চলেছে বিশ্ব। চলতি বছরের শেষ প্রান্তেই তা আছড়ে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রে—এমনটাই দাবি করেছেন অর্থনীতিবিদ নুরিয়েল রুবিনি। ঘটনাচক্রে, ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী মন্দার পূর্বাভাস যাঁরা দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে নুরিয়েল অন্যতম। তাঁর দাবি, শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, ২০২২ সালের শেষ দিকে সারা বিশ্বে আছড়ে পড়তে চলেছে এই মন্দা, যা স্থায়ী হতে পারে ২০২৩ সাল পর্যন্ত।

২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস নেমেছিল। মন্দ ঋণ ও আর্থিক খাতে অনিয়মের চাপে গোটা ব্যাংকব্যবস্থা যখন রসাতলে যাওয়ার উপক্রম, তার অনেক আগেই সেই সংকটের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন রুবিনি। সে জন্য অর্থনৈতিক মহলে ‘ডক্টর ডুম’ নামে ডাকা হয় তাঁকে। তিনি বলেন, ‘এই মন্দা আছড়ে পড়লে বহু প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, করপোরেট সংস্থার মৃত্যু ঘটবে। তাদের নগ্নরূপ গোটা বিশ্ব দেখবে।’