জরিপের প্রতিবেদন

ব্যবসায়িক সফর আর কখনো মহামারির আগের পর্যায়ে ফিরবে না

ব্যয়বহুল ব্যবসায়িক ভ্রমণের দিন সম্ভবত চিরদিনের মতো শেষ হয়ে গেছে। বলা হয়েছে, ব্যবসায়িক ভ্রমণ আর কখনো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরবে না।

মর্নিং কনসাল্ট নামের এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণার সূত্রে সিএনবিসি এই সংবাদ দিয়েছে। তারা বলছে, করপোরেট বাজেটে কাটছাঁট ও ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে কাজের ধারা জনপ্রিয় হওয়ার কারণে ব্যবসায়িক ভ্রমণের ধারা চিরদিনের মতো বদলে গেছে।

প্রতিবেদনের আরেকটি দিকে আলো ফেলা হয়েছে। সেটি হলো, ব্যবসায়ী জনগোষ্ঠীর বয়সেও পরিবর্তন এসেছে। বলা হয়েছে, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এখন যাঁরা ভ্রমণ করছেন, তাঁদের বয়স এখন আগের চেয়ে কম। তাঁরা এখন বিমানের সাশ্রয়ী শ্রেণিতে ভ্রমণ করেন। তবে বয়স্ক ব্যবসায়ীরা সাধারণত আরামদায়ক অভিজাত শ্রেণিতে বিমান ভ্রমণ করেন। তরুণ ব্যবসায়ীদের অর্ধেকের বার্ষিক আয় ৫০ হাজার ডলারের কম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন ধারার এক ব্যবসায়িক মডেল ধীরে ধীরে হলেও শিকড় ছড়াচ্ছে আর এর মধ্য দিয়ে দানা বেঁধে উঠছে এক ‘নতুন বাস্তবতা’।

ব্যক্তিগত ভ্রমণ বিশ্বজুড়েই বাড়ছে। কিন্তু মর্নিং কনসাল্ট জানাচ্ছে, গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়িক ভ্রমণের হার স্থবির ছিল। ৪ হাজার ৪০০ জন মার্কিন নাগরিকের ওপর জরিপ চালিয়ে তারা দেখেছে, ২০২২ সালে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক ভ্রমণের প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ শতাংশ।

মহামারির আগের সময়ের তুলনায় অনেক কম মানুষ এখন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ভ্রমণ করছেন। যাঁরাও–বা তা করছেন, তাঁরা আগের চেয়ে ভ্রমণের হার কমিয়ে দিয়েছেন।
জরিপে অংশ নেওয়া দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বলেন, ব্যবসায়িক ভ্রমণের ক্ষেত্রে তাঁদের কোম্পানিতে নীতিগত পরিবর্তন এসেছে। ৬০ শতাংশ বলেন, ব্যবসায়িক সফরের হার কমানো হয়েছে এবং ৫৬ শতাংশ বলেন, আগের চেয়ে অনেক কম কর্মীকে সফরে পাঠানো হচ্ছে।

মহামারির আগে যাঁরা বছরে অন্তত তিনবার ব্যবসায়িক সফরে যেতেন, তাঁদের জিজ্ঞাসা করা হয়, এরপর তাঁরা কবে আবার সফরে যাবেন বলে আশা করছেন। বড় একটি অংশ জানায়, তাঁরা আর কখনো ব্যবসায়িক সফরে যাবেন বলে মনে করছেন না। এই প্রবণতা উন্নত দেশের ক্ষেত্রে বেশি দেখা গেছে। যেমন ফ্রান্সের ৫৮, যুক্তরাজ্যের ৫৫, জার্মানির ৫০, কানাডার ৪৯ ও জাপানের ৪৮ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা আর কখনো ব্যবসায়িক সফরে যাওয়ার আশা করছেন না। সেই তুলনায় ভারতের মাত্র ১৪ শতাংশ এ কথা বলেছেন।

এদিকে ব্যবসায়িক সফরের পরিমাণ কমে এলেও খরচ বাড়ছে। ডেলয়েটের আরেক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছর ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করপোরেট সফরের ব্যয় দ্বিগুণ হয়েছে। এমনকি ২০২৪–২৫ সালের মধ্যে তা মহামারির আগের সময়ে ফেরত যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মূলত উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বিমান ও হোটেলের ভাড়া অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় সফরের ব্যয় বেড়েছে বলে সিএনবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সাশ্রয়ী বিমান ও হোটেলের খোঁজ করছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক সফরের ব্যয় বাড়বে। মূলত বিভিন্ন সম্মেলনে অংশ নিতে কর্মীরা বিদেশ সফরে যাবেন। যাঁরা সাধারণত ব্যবসায়িক ভ্রমণ করেন তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশ জরিপে বলেন, এ বছর সেমিনারে অংশ নেওয়ার আশা করছেন তাঁরা।

এ ছাড়া মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রকৃতির ব্যবসায়িক সফরের প্রবণতা বাড়ছে। মূলত মহামারির সময় মিশ্র প্রকৃতির কাজের ধারা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে এই প্রবণতা বাড়ছে। অর্থাৎ মানুষ কাজের সঙ্গে অবসরের সমন্বয় ঘটাচ্ছে। বেশি সময় ভ্রমণ করা যায় বলে এসব ক্ষেত্রে মানুষ অনেক সময়ই বেশি ব্যয় করে।