যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের বিরুদ্ধে আবারও স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন মহলের দাবি, ব্রেক্সিট-উত্তর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভারতের এক বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা থেকে সুনাকের পরিবার আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে।
ভারতের বেঙ্গালুরুভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি ও পরামর্শক কোম্পানি ইনফোসিসে ঋষি সুনাকের স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির ৫০ কোটি পাউন্ডের শেয়ার আছে। এখন তা নিয়ে যুক্তরাজ্যের সরকারের উচ্চ মহলে ‘স্বচ্ছতা’জনিত প্রশ্ন উঠেছে।
হাউস অব কমনসের ব্যবসা ও বাণিজ্যবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ও লেবার পার্টির পক্ষ থেকে ঋষি সুনাকের কাছে দাবি জানানো হয়েছে, তিনি যেন স্ত্রীর আর্থিক বিষয়ে আরও উন্মুক্ত হন। তাঁদের এসব দাবির মূল কারণ হলো, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভারতের যে বাণিজ্য আলোচনা চলছে তাতে ইনফোসিস লাভবান হতে পারে। এ প্রসঙ্গে একজন শীর্ষ বিশেষজ্ঞ বলেন, ঋষি সুনাকের উচিত হবে, এই বাণিজ্য আলোচনা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া।
হাউস অব কমনস ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ড্যারেন জোন্স বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছেন। সে জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, নিজের স্বার্থ সম্পর্কে তাঁর পরিষ্কার ঘোষণা দেওয়া। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার বেলায়ও তিনি সেটা করবেন বলে আশা করি’।
যুক্তরাজ্যের সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী নাদিন ডরিস সংসদ সদস্য হিসেবে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর এই দাবি উঠেছে।
আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। সেই সম্মেলনের ফাঁকে তিনি বাণিজ্য নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
এদিকে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী কেমি বেডেনক সম্প্রতি ভারত সফর করে দেশে ফিরেছেন। তিনি ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করেছেন।
ইনফোসিসের সঙ্গে যুক্তরাজ্য সরকার ও কোম্পানিগুলোর চুক্তি আছে। এখন তারা যুক্তরাজ্যের ভিসা নীতি সংশোধনের মাধ্যমে সে দেশে ঢোকার চেষ্টা করছে, যদিও তাদের অনেক ঠিকা কর্মী যুক্তরাজ্যে কাজ করছে।
যুক্তরাজ্য-ভারতের যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আলোচনা হচ্ছে, সেখানে ভারতের অন্যতম দাবি হলো, যুক্তরাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে আরও বেশি ভারতীয় কর্মীদের নিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে ভিসা নীতি সংশোধন। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য স্কচ হুইস্কি ও গাড়ির মতো পণ্য ভারতে রপ্তানির বেলায় শুল্ক হ্রাসের দাবি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন। যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে গতি আনা, দেশে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ও যুক্তরাজ্যের জনগণের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করাই তাঁদের লক্ষ্য’।
এ ছাড়া তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বার্থের বিষয়টি ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে ভারতের টাটা ও ইনফোসিস যুক্তরাজ্যের ভিসাব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি কাজে লাগিয়েছে, অর্থাৎ এরা যুক্তরাজ্য কার্যালয়ে কাজ করানোর জন্য অনেক ভারতীয়কে নিয়ে আসে। ২০১৯ সালে ইনফোসসিস এ রকম ২ হাজার ৫০০ কর্মীর জন্য ভিসার আবেদন করেছিল। ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বলছে, যুক্তরাজ্যে তাদের আরও ভিসা দরকার।
এই বাস্তবতায় ঋষি সুনাকের সামনে আরও চ্যালেঞ্জ আছে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা।